লিথুয়ানিয়ার চলচ্চিত্রকার মান্তাস কোয়েদারাভিসাস গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মারিউপোলে রুশ সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন। পরে তাকে হত্যা করা হয়। সেই সময় তার বাগদত্তা হান্না বিলোব্রোভা পাশে ছিলেন। সেখানে ধারণকৃত ফুটেজ সঙ্গে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এরপর ভিডিও এডিটর দুনিয়া সিচোভের সঙ্গে মিলে সেগুলো সম্পাদনা করেছেন হান্না। ছবিটির নাম রাখা হয়েছে ‘মারিউপোলিস টু’।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) আয়োজকরা উল্লেখ করেন, ‘উৎসবে ছবিটি দেখানো অপরিহার্য। তাই আমরা এটি তালিকায় যুক্ত করেছি।’
মান্তাস কোয়েদারাভিসাসের ছবির তালিকায় রয়েছে ‘বারজাখ’ (২০১১), ‘মারিউপোলিস’ (২০১৬) এবং ‘পার্দেনন’ (২০১৯)। এছাড়া নৃবিজ্ঞানে পিএইচডি করেছেন তিনি।
চলতি বছর ইউক্রেনের ডনবাসে যান মান্তাস কোয়েদারাভিসাস। শহরটি রুশ হামলার কেন্দ্রস্থল। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ডনবাসে ছবির কাজ করেছিলেন তিনি। সেখানকার কলাকুশলীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিহত হলেন গুণী এই নির্মাতা।
কান উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘মারিউপোলিস টু’ বোমা হামলার মধ্যে টিকে থাকা মানুষের জীবনকে তুলে ধরেছে। ট্র্যাজেডি ও আশা উভয়ই মিশে আছে এতে।
শুটিং নোটে লেখা রয়েছে- ‘আপনি কি জানেন, মারিউপোলের সবচেয়ে অসাধারণ বিষয় কী? এখানকার কোনও বাসিন্দাই মৃত্যুকে ভয় পায়নি। এখানে মৃত্যু আগে থেকেই ছিল এবং কেউ কোনও কাজে না লেগে মরতে চায়নি। মানুষ তাদের বিপদে একে অপরকে সহায়তা করেছিল। বোমা হামলা সত্ত্বেও তারা ঘরের বাইরে আড্ডা দিয়েছে। কারও কাছে কোনও টাকা অবশিষ্ট ছিল না। জীবনের গল্প অল্প সময় বাকি বলে মনে হয়েছে। তাই নিজেদের কাছে যেটুকু ছিল তা নিয়েই সন্তুষ্টি খুঁজে নিয়েছেন তারা। কোনও অতীত বা ভবিষ্যত বলে কিছু ছিল না, কোনও বিচার ছিল না। এটি ছিল নরকের ভেতর স্বর্গ, প্রজাপতির ডানা একে অপরের কাছাকাছি উড়ছে, এর যন্ত্রণাদায়ক মাত্রায় মৃত্যুর গন্ধ। এটি ছিল জীবনের হৃদস্পন্দন।’
ভূমধ্যসাগরের তীরে কানসৈকতে ‘সিনেমা দ্যু লা প্লাজ’ শাখায় আগামী ২০ মে দেখানো হবে বলশেভিক রুশ বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সের রেজিস ভারনিয়ে পরিচালিত ‘ইস্ট/ওয়েস্ট’ (১৯৯৯)। এর মাধ্যমে রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনের জনগণের প্রতি সহমর্মিতা ও দেশটির জন্য সমর্থন জানাবে উৎসব কর্তৃপক্ষ। ২ ঘণ্টা ব্যাপ্তির অসাধারণ ছবিটির কিছু অংশের শুটিং হয়েছিল ইউক্রেনের কিয়েভে। ২০০০ সালের অস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার ছবি শাখায় মনোনয়ন পায় এটি।
কানের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে ইউক্রেনের পেশাদার চলচ্চিত্রকর্মীদের কান ভ্রমণ ও হোটেল ভাড়া মেটাতে আর্থিক সহায়তা দেবে ইউরোপিয়ান কমিশন। এর মাধ্যমে ইউক্রেনের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পেরে খুশি মার্শে দ্যু ফিল্ম সংশ্লিষ্টরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা ইউরোপিয়ান কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অনেক সাংবাদিক এবারের কান উৎসবে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন না। তাদের কাউকে অ্যাক্রেডিটেশন দেয়নি আয়োজকরা। এরমধ্যে দুই সাংবাদিক গত কয়েক আসরে নিয়মিত অংশগ্রহণ করলেও এবার অ্যাক্রেডিটেশন পাননি।
ব্যাজের জন্য আবেদন করা রুশ কয়েকজন সংবাদকর্মী কান প্রেস অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তারা। তারপর রুশ সংবাদকর্মীদের অ্যাক্রেডিটেশন দেওয়ার বিষয়টি ভাবা হবে।
এর আগে ইউক্রেনে আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কান কর্তৃপক্ষ। গত ১ মার্চ এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে তারা।
পুতিন সরকারের সঙ্গে নিজেদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করেছেন কেউ কেউ। অনেকে রুশ সরকারবিরোধী মনোভাব দেখিয়েছেন। তবুও আয়োজকদের মন গলেনি।
চলচ্চিত্র দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন কান উৎসবের ৭৫তম আসরের অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পেয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের ছবি। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলমান থাকায় বিষয়টি আলাদাভাবে আলোচিত হচ্ছে।
প্রতিযোগিতা শাখায় স্বর্ণপামের জন্য লড়বে রাশিয়া থেকে নির্বাচিত দেশটির পরিচালক কিরিল সেরেব্রেনিকভের “চাইকোভস্কি’স ওয়াইফ”। আঁ সাঁর্তে রিগায় নির্বাচিত হয়েছে ইউক্রেনের মাকজিম নাকোনেশনিয়ের ‘বাটারফ্লাই ভিশন’। এটি তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। ফলে ক্যামেরা দ’র পুরস্কারের দৌড়ে থাকছেন তিনি। কান উৎসবের জেনারেল ডেলিগেট থিয়েরি ফ্রেমোঁ মনে করেন, ছবিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর প্রেক্ষাপট ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল।
স্পেশাল স্ক্রিনিংস শাখায় জায়গা পেয়েছে ইউক্রেনের সার্গেই লোজনিৎজা পরিচালিত ‘দ্য ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব ডেসট্রাকশন’।
৭৫টি দেশের চার হাজারের বেশি সংবাদকর্মী এবার অ্যাক্রেডিটেশন পেয়েছেন। ভূমধ্যসাগরের তীরে দক্ষিণ ফ্রান্সে ৭৫তম কান উৎসব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত।