মূলত কারসাজির উদ্দেশ্যে বিপুল শেয়ার কিনে প্রথমে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এতে করে ওই শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির একপর্যায়ে উল্লেখিত বিনিয়োগকারীরা তাঁদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে মুনাফা তুলে নেন। এ ছাড়া সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ারের দাম বাড়াতে সজীব হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা মিলে দাম বাড়াতে সিরিজ লেনদেনের ঘটনা ঘটান। সজীব হোসেনের সঙ্গে এ সিরিজ লেনদেনে জড়িত ছিলেন আবদুল কুদ্দুস আমিন, মো. সুলেয়মান ও নুরুন্নেসা সাকি। ভিন্ন ভিন্ন বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ব্যবহার করে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির আশ্রয় নেন এসব বিনিয়োগকারী।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি হয় গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে। ওই কয়েক মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম তিন গুণ বৃদ্ধি পায়। ডিএসইতে গত বছরের ১৩ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ৯ টাকা ৬০ পয়সা। ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ টাকা ২০ পয়সায়। এ কয়েক মাসের মধ্যেই এসব বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নেন। ডিএসইতে থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই-ডিসেম্বর (অর্ধবার্ষিক) প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস ছিল ঋণাত্মক। কিন্তু ২০২১ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) সেই আয় ইতিবাচক হয়ে যায়। আর এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের কারসাজির সঙ্গে যুক্ত হন উল্লেখিত বিনিয়োগকারীরা। ধারণা করা হচ্ছে, কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মিলেই এ কারসাজির ঘটনা ঘটানো হয়।
দাম বাড়াতে যাতে কারসাজিকারকদের সুবিধা হয়, সে জন্য ইপিএস বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। এমনকি ২০১৯-২০ সালের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দিলেও ২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। ইপিএস বৃদ্ধি ও লভ্যাংশ ঘোষণা কোম্পানিটির দাম বাড়াতে সহায়তা করে।
শেয়ারবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরো প্রথম শ্রেণির একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে সমবায় অধিদপ্তরের কর্মরত। তিনি তাঁর স্ত্রী, বাবা, শ্যালকসহ নিকটাত্মীয়ের নামে শেয়ার ব্যবসা করে থাকেন। সাফকো স্পিনিং ছাড়াও শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত একাধিক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকে তাঁর বেশ কিছু বিও হিসাব রয়েছে। নিজের ও নিকটাত্মীয় ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তির বিও হিসাবে লেনদেন করেন তিনি। সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার নিয়ে কারসাজির ক্ষেত্রে হিরো সাউথইস্ট ব্যাংকের সহযোগী এক প্রতিষ্ঠানে থাকা বিও হিসাব ব্যবহার করেছেন বলে ডিএসইর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
সাফকো স্পিনিং ২০০০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটির শেয়ারের ৩০ শতাংশ রয়েছে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ারের বড় অংশ প্রথমে কম দামে কিনে নিয়ে তারপর সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে এটির দাম বাড়ানো হয়।
ডিএসইর তদন্তে কারসাজির তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পর এখন বিএসইসির দুই কর্মকর্তাকে এ কারসাজি ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএসইসি উপপরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল ও মোহাম্মদ রতন মিঞার সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কমিটিকে কারসাজির পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।