বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ২১ আগস্টের হামলা মামলা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনীতি করছে। ওই ঘটনা ছিল গভীর নীল নকশার অংশ। যে নীল নকশার সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা জড়িত কি না, তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’
এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন রিজভী। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এতে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার লেগে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী। ওই হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার শ্রবণেন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
হামলার ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ ধরনের হামলা কোনো দিনও ঘটা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক, খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়নি। কিন্তু তাঁর তো প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা রয়েছে। কারণ, তিনি তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর যে সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব রয়েছে, সেটা তো অস্বীকার করা যায় না।’
গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। এ জন্য উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে।’
২১ আগস্টের ঘটনায় বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে জড়ানোর প্রতিবাদ করেন রিজভী। তিনি আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যেকোনো সরকারের আমলে কখনো কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার জন্য সেই সরকার দায়ী হতে পারে না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহুমুখী চক্রান্তকারীদের এজেন্টরা দেশে-দেশে নানা নাশকতা করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘কেবল প্রধানমন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই নন, দু-একটি পত্রিকা ও সরকারি নেতাদের মালিকানাধীন টেলিভিশনে ইনিয়ে-বিনিয়ে বেসামাল ভাষায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ওপর দোষ চাপাতে অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য, প্রকৃত ঘটনা এভাবে মিথ্যাচার আর অপপ্রচারের মাধ্যমে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করা যাবে না।’
বিচারিক আদালতে রায়ের পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত দুটি মামলা হাইকোর্টে শুনানির পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন মামলার বৃত্তান্ত (পেপারবুক) তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মামলায় রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।
রিজভী বলেন, ‘সুপরিকল্পিত নীলনকশা অনুয়ায়ী এই ঘটনাকে ন্যক্কারজনক কায়দায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে আসছে আওয়ামী লীগ। তার বড় প্রমাণ হলো কথিত সম্পূরক চার্জশিটের নামে এই মামলায় তারেক রহমানকে জড়িয়ে ফরমায়েশি রায়ে সাজা দেওয়া। যা ছিল সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, গভীর ষড়যন্ত্রমূলক ও দীর্ঘদিনের মাস্টারপ্ল্যানের ফসল।’
রিজভী আরও বলেন, এই হামলা ঘটনায় তারেক রহমান ও বিএনপি সরকারকে জড়িত করার কাহিনি যে অসত্য, তা সর্বজনীনভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই হীন রাজনীতি দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত ও হতভম্ব।
রিজভী বলেন, ২১ আগস্টের বিচারাধীন মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-নেতারা নির্বিঘ্নে এবং ক্রমাগত এমন বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন, যা মামলার রায়কে প্রভাবিত করে আসছে।