মিয়ানমারের ইচ্ছা পূরণে সরকার কাজ করছে বলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করে বিএনপি। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই মতের কথা জানান।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গার বিষয়ে সরকার সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারের কাছে নতিস্বীকার করেছে, তারা (মিয়ানমার) যে ফর্মুলা দিয়েছে সেই ফর্মুলার কাছে তারা নতিস্বীকার করছে। সর্বশেষ যে সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা শরাণার্থীর প্রত্যাবাসনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তার সমাধান হয়নি অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, তাদের নিরাপত্তা, তাদের নিজেদের সম্পত্তির মালিক হয়ে বাসভূমিতে ফিরে যাওয়া, তাদের সম্পত্তির মালিক হওয়া- এ বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়নি বলেই আস্থার অভাবে রোহিঙ্গারা চলে যায়নি।
ফখরুল বলেন, এসব ক্ষেত্রে কোনো কাজ না করে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মিয়ানমারের যে ফর্মুলা, তাদের যে ইচ্ছা, সেটাকে পূরণ করবার জন্য সরকার কাজ করছে বলে আমরা মনে করি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সরকারের ব্যর্থতাও দায়ী উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি, আসলে এ সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে রোহিঙ্গা বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকভাবে সুষ্ঠুভাবে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনটা আদায় করা যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমর্থন একটা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করুক।
রোহিঙ্গা সমস্যার কীভাবে সমাধান আসতে পারে- প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আগে বলেছিলাম যে, এই সমস্যার সমাধানে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে- অল পার্টি ডায়ালগ করা। একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে ওই খান থেকে বেরিয়ে আসত আমাদের কী করতে হবে?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রথমে দরকার ছিল সরকার প্রধানের সেই সমস্ত রাষ্ট্র সফর করা, হেড অব দ্য স্টেটের সাথে দেখা করা, যারা মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সেটা সরকার করে নাই, এখন পর্যন্ত তারা করে নাই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সফর বাংলাদেশের সনকার প্রধান বা বাংলাদেশের সরকারের কোনো প্রতিনিধিদল করেন নাই। মিয়ানমার যে ফর্মুলাগুলো দিচ্ছে সেগুলো তারা নিচ্ছেন। এখানে বুঝা যায় তারা বাংলাদেশের ইন্টারেস্টটা সেভাবে দেখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ব্যাপক প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কর্মসূচি। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বসতভিটাসহ সম্পদ ফেরত ও নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত না হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না বলে আগের অবস্থানেই অনঢ় রয়েছে।
২১ আগস্টের ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ অভিহিত করে এমন ‘মিথ্যাচার’ বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন যে র্যালি হওয়ার কথা ছিল তা পরিবর্তন করে ২ সেপ্টেম্বর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। ১ সেপ্টেম্বর বিকালে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ফখরুল। দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে মহাসচিব ছাড়া খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।