নিজস্ব প্রতিবেদক: গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, “একমাত্র বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সত্তা দেয়ার জন্য চেষ্টা করে সফল হয়েছেন। শোক দিবসে শুধু গতানুগতিকভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিষয়ে কথা না বলে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দ্বিতীয় প্রজন্ম যাতে তৈরী হতে না পারে সে জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আদর্শিক জায়গায় কর্মী প্রস্তুত করা দরকার, যেনো আরেকটি পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের মতো ঘটনা দৃঢ়তার সাথে, সাহসের সাথে মোকাবেলা করা যায়”।

২৫ আগষ্ট রাজধানীতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আইন সমিতি আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী এসব কথা বলেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের প্রচেষ্টা কোনভাবে ব্যর্থ বলতে চাইনা।

শেখ হাসিনা সরকার বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুর বিচারের জন্য আমাদের ৩৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। যখন কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিলো না, পরিস্থিতি পরিবর্তিত, খুনীরা যখন বিভিন্নভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত দেশে, রাজনীতিতে, অর্থে এবং দেশের বাইরে, তাদের বিচার করে দাম্ভিকর্তা চূর্ণ করা শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে”।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, “ইতিহাসের অনিবার্যতায় আমাদের একটি জায়গায় পৌঁছে যেতেই হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে দিয়ে দেশটা প্রতিষ্ঠিত। ৩২ নম্বরে বাঙালির উৎসের আর অস্তিত্বের বেদীমূলে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে দেশের একজন লোকও যেনো বাদ না থাকে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করতে হলে, নাগরিক হিসেবে নিজেকে ভাবতে হলে সকল মানুষকে সেখানে আত্মসমর্পণ করতে হবে, যেখানে বাঙালির সমস্ত অস্তিত্বের উৎস প্রাঞ্জল হয়ে আমাদের মাঝে রয়েছে। সেই অস্তিত্তের উৎস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আদর্শিক জায়গা কখনো খুন করা যায় না, তাই বঙ্গবন্ধুকে কখনো খুন করা যায় না”। মুখ্য আলোচক বলেন “শোক দিবসের প্রত্যয়কে দৃঢ়তার সঙ্গে ধারণ করতে হবে মনে, স্নায়ুতে, বিশ্বাসে, স্বপ্নে, জাগরণে সর্বত্র।

যে ব্যক্তি তার অস্তিত্বের কথা জানে না, ইতিহাস জানে না, শেকড়ের কথা জানে না, সে ব্যক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় নাগরিক হিসেবে তার মৌলিক অধিকার দাবী করতে পারা উচিত নয়”। গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, “অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিনির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফিরিয়ে আনা এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বাঙালি জাতিকে ফিরিয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনেকের দর্প চূর্ণ করে দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বাঙালি জাতিকে অব্যহতি দিয়েছিলেন”। শোক দিবসকে সামনে রেখে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি যেখানে বঙ্গবন্ধু মিশে আছে, আছে অসাম্প্রদায়িকতা, আছে হাজার বছরের বাঙালির গৌরবময় অধ্যায় সে সব শিক্ষায় কর্মীদের শিক্ষিত করার জন্য ছাত্র নেতৃবৃন্দকে মন্ত্রী আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “পৃথিবীতে আর কোন নেতা নেই যিনি একসাথে স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেছেন, সারা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং সেটা বাস্তবায়ন করেছেন। বঙ্গবন্ধু সেটাই করেছেন”।

মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের একটা অংশের বিচার হয়েছে। প্রত্যক্ষভাবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, শাস্তি হয়েছে। কিন্তু যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করিয়েছে তাদের শাস্তি হয়নি। এবার তাদের বিচার করতে হবে। জিয়াউর রহমানের কী ভূমিকা ছিলো এবং অন্যান্যদের কী ভূমিকা ছিলো সেটা বের করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীরাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার কথা বলে গেছে”। প্রধান অতিথি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির বন্ধু নয়, বিশ্ববন্ধু। জাতসংঘে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমি শোষিতের পক্ষে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বনেতা। তাই আজ শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে হবে”।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার পথে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি। এই আগস্টে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করা। আমরা আজ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির গণতন্ত্র চাই, যেখানে সরকারে ও বিরোধী দলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি মূল্যবোধ বাস্তবায়িত হবে এমন বাংলাদেশ আমরা চাই”।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হক, বিচারপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এম আমিন উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আইন সমিতির জাতীয় শোক দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছার।

Leave a Response