বাংলাদেশে নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তুলনায় তাদের ঘরের বাইরে বেশি যেতে হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও গণপরিবহনে যাতায়াতকালে ৯৪ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আবার যৌন হয়রানির শিকার অনেক নারীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে চলন্ত বাস থেকে সড়কে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকরি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় জানা যায়, অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলো না থাকা এবং সিসি টিভি ক্যামেরা না থাকায় তদারকির অভাবে বাসে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই অবস্থায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গণপরিবহনে বিশেষ করে রাজধানীর কয়েকটি বাস কোম্পানিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, গণপরিবহনে নারী নির্যাতনরোধে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং তা মনিটরিং করা, চালক ও সহযোগীদের ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে এজন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়াও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিনোদন কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম এনডিসি বলেন, গণপরিবহনে যৌন হয়রানি রোধে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কাজ করছে। বাসগুলোতে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো যায় কিনা এজন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। একইসঙ্গে বাসগুলোতে নির্যাতন রোধে একটি হেল্পলাইন নম্বর ব্যবহার করার বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।

ব্র্যাকের পরিচালিত ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, গণপরিবহনে যাতায়াতকালে ৯৪ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারের ৪১৫ জন নিম্ন ও নিম্নমধ্য আয়ের নারীদের ওপর এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। ভুক্তভোগীরা জানান, তারা ২৬-৪০ বছর বয়সী পুরুষদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি (৫৯ শতাংশ) হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির মধ্যে রয়েছে ইচ্ছাকৃত স্পর্শ করা, চিমটি কাটা, কাছ ঘেঁষে দাঁড়ানো বা ধাক্কা দেওয়া, নারীদের কাঁধে হাত রাখা ইত্যাদি। উত্তরদাতাদের মধ্যে শতকরা ৮১ শতাংশ জানান, এই পরিস্থিতির শিকার হয়েও তারা চুপ থাকেন, এর প্রতিবাদ করেন না।

এ ছাড়া যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে এই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিগত ১৩ মাসে গণপরিবহনে ২১ জন নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এসব ঘটনায় চালক-হেলপাররা মিলে ৯টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৮টি, শ্লীলতাহানি ৪টি। আর এ ধরনের ঘটনায় মোট ৫৫ জনকে অপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়।

Leave a Response