চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় একটি মসজিদের ইমামের কক্ষে তার নিজের ছেলেসহ তিন শিশু-কিশোরের রহস্যজনক মৃত্যুর দুটি কারণ জানিয়েছে পুলিশ। তবে তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশের ধারণা, ইমামের কক্ষটিতে রাখা ব্যাটারির এসিড তাপে বিষাক্ত হয়ে গ্যাসে রূপান্তরিত হয়েছিল। অথবা ওই তিনজন ব্যাটারির এসিড পান করেছিল। এজন্য তাদের মৃত্যু হতে পারে।
শনিবার বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেন, যে কক্ষে ইমাম ও তার ছেলে থাকতেন সেই কক্ষটি আকারে খুবই ছোট। একই কক্ষে মসজিদের আইপিএস’র ব্যাটারির এসিড ছিল। ফলে কক্ষটি কেমিক্যালের তীব্র গন্ধময় হয়ে ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে, তিন শিশু-কিশোর ওই কক্ষে দরজা বন্ধ অবস্থায় অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্তের জন্য শুক্রবার রাতেই ঢাকা থেকে কেমিক্যাল এক্সপার্ট ও ফরেনসিক এক্সপার্টের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে এবং তারা প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে।
পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির আরও বলেন, তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পাশাপাশি জেলা পুলিশের সিআইডি, গোয়েন্দা সংস্থাও বিষয়টি তদন্ত করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মো. নাসিম উদ্দিন, ডিবি পুলিশের ওসি মামুন, চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, সাবেক সভাপতি কাজী সাহাদাত ও গোলাম কিবরিয়া জীবন।
এর আগে শুক্রবার রাতে ঢাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দুটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ওই দলে ছিলেন ঢাকার সিআইডি কার্যালয়ের ক্রাইম টিম অ্যানালাইসিস বিভাগের পরিদর্শক মর্তুজা কবির ও রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ পিন্টু পোদ্দার। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে মতলব দক্ষিণ থানার পুলিশকে ওই তিনজনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিয়েছেন তারা।
এদিকে মৃত তিন শিশু-কিশোরের ময়নাতদন্তের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এই কার্যক্রম তদারকির জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যুর ঘটনাটি ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত করছেন পুলিশ সুপার। তার সঙ্গে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) ও মতলব দক্ষিণ থানার ওসি।
স্থানীয়রা জানান, ইমামের কক্ষে মাইকের ব্যাটারির পানিতে তীব্র মাত্রার এসিড মিশ্রিত থাকে। ওই পানি দেখতে স্বাভাবিক পানির মতোই। পানি মনে করে সেটি পান করায় ওই শিশু-কিশোরদের মৃত্যু হতে পারে।
গতকাল শুক্রবার উপজেলার পূর্ব কলাদী জামে মসজিদের ইমামের কক্ষে ৩ শিশু কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল। তিনজনের মধ্যে মসজিদটির ইমাম মো. জামাল উদ্দিনের আট বছর বয়সী সন্তান আবদুল্লাহ আল নোমানও ছিল।
মারা যাওয়া ওই তিন শিশু-কিশোর হলো- আবদুল্লাহ আল নোমান (৮), মো. ইব্রাহিম (১২) ও মো. রিফাত (১৫)। এর মধ্যে নোমান ওই মসজিদের ইমাম মো. জামাল উদ্দিনের বড় ছেলে। মো. ইব্রাহিম উপজেলার নাটশাল গ্রামের কামাল হোসেন পাটোয়ারির ছেলে। সে স্থানীয় ভাঙ্গারপাড় ইবতেদায়ি মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। মো. রিফাত পার্শ্ববর্তী নলুয়া গ্রামের মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে ও একই মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।