আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গত ১১ বছরে দেশে ১২০৯ জন মানুষ গুম হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘এদেশে গুমের শুরু হয়েছে ১৯৭২ সাল থেকে। সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে এপর্যন্ত সারাদেশে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা ১২০৯ জন।’ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সূত্র উল্লেখ করে রিজভী গুম হওয়া মানুষের এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘গুম হওয়া ১২০৯ জনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের সংখ্যা ৭৮১ জন। এর মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি সাবেক এমপি এম. ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, লাকসামের বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, সুমন, ছাত্রনেতা জাকির, নিজামুদ্দিন মুন্না, তারিকুল ইসলাম ঝন্টু, আদনান চৌধুরীসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে দুই মাস গুম করে রাখার পর অন্য দেশে ফেলে দিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা এখনও স্বজনদের ফিরে আসার পথ চেয়ে বসে আছেন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘ছোট শিশুরা অপেক্ষা করছে বাবা ফিরে আসবে সেই আশায়। সন্তানের দুশ্চিন্তায় অনেকের বাবা-মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। নিখোঁজ সুমনের মা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অন্ধ হয়ে গেছেন।’
রিজভী বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৯ সালের শুরু থেকে ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৫০৭টি জোরপূর্বক গুমের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছে নাগরিক সমাজ বিষয়ক গ্রুপগুলো। গুম হয়ে যাওয়া মানুষের ভেতরে ২৮৬ জন জীবিত অবস্থায় ঘরে ফিরে এসেছেন। ৬২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে মৃত অবস্থায়। বাকি ১৫৯ জন মানুষ আজও নিখোঁজ রয়েছেন।’
বাংলাদেশে গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার বলে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় মদত ছাড়া কাউকে গুম করা অসম্ভব। গুম ও ক্রসফায়ারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সমাজে, সংবাদ মাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তাতে সরকারের টনক নড়ে না। এতেই বোঝা যায় এতসব গুমের হোতা কারা।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের মদতদানকারীরাও বিচারের আওতার বাইরে থাকবে না। প্রতিটি গুমের তদন্ত ও বিচার একদিন হবেই।’