সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আজ শনিবার স্থগিত দুটি কেন্দ্রে ভোট শেষে রাতে এ ফলাফল জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান।

আরিফুলকে বিজয়ী ঘোষণার পর তাঁর কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত ৩০ জুলাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হলে আমি বিপুল ব্যবধানে জয়ী হতাম। তবে আমি কখনোই জনগণের ওপর থেকে বিশ্বাস হারাইনি। ভোটারেরা আমার আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। তাই এত কারচুপি ও অনিয়মের পরও আমি জয় পেয়েছি। আজ (গতকাল) যেভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে, এর ভোটের হিসেব দেখেই প্রকৃত চিত্র সহজে অনুমান করা যায়।’ তিনি আরও জানান, এখন নগরবাসীর সেবা ও উন্নয়নে তিনি আরও মনোযোগী হবেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৪ টি। এর মধ্যে স্থগিত হওয়া দুটো কেন্দ্রের মোট ভোটার ৪ হাজার ৪৭৮। এ হিসেবে আরিফুল হক চৌধুরীকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করতে ১৬২ ভোটের প্রয়োজন ছিল। তবে আরিফুল দুই কেন্দ্র মিলিয়ে পেয়েছেন দুই হাজার ১০২ ভোট। সব কেন্দ্র মিলিয়ে প্রাপ্ত ফলাফলে তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৬ হাজার ১৯৬ ভোট বেশি পেয়েছেন।

আরিফুলের প্রাপ্ত ভোট ৯২ হাজার ৫৯৩ ভোট। অন্যদিকে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রাপ্ত ভোট ৮৬ হাজার ৩৯৭ ভোট। সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুনঃ ভোটে আরিফুল গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পেয়েছেন এক হাজার ৪৪ ভোট এবং কামরান পেয়েছেন ১৭৩ ভোট। অপরদিকে হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আরিফুল পেয়েছেন এক হাজার ৫৩ ভোট এবং কামরান পেয়েছেন ৩৫৪ ভোট।

সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান বলেন, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে পুনঃ ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কোথাও ঘটেনি।

গত ৩০ জুলাই সিলেটসহ রাজশাহী ও বরিশালে একযোগে এই তিন সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোটসহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে সিলেটে ভোটগ্রহণ চলে। সেদিন অনিয়মের অভিযোগে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী বুরহানউদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়।

স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্র ছাড়া বাকি ১৩২টি কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী বিএনপির আরিফুল পেয়েছিলেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট। আরিফুলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। আরিফুল ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্রের মোট ভোটার ৪ হাজার ৭৮৮। এ দুটি কেন্দ্রের ফলাফলের অপেক্ষায় মেয়র পদের ফল আটকে ছিল।

সিলেট পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা হয় ২০০২ সালে। প্রথম নির্বাচন হয় চারদলীয় জোট সরকার আমলে। প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি পৌরসভা থাকাকালে চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার বিজয়ী হয়েছিলেন কামরান। তৃতীয় নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মেয়র পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।’ পরিবর্তন’ আওয়াজ তুলে আরিফুল হক চৌধুরী ৩৫ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে কামারানকে হারিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আরিফুল হক পেয়েছিলেন এক লাখ সাত হাজার ৩৩০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট। তাঁদের ভোটের ব্যবধান ছিল ৩৫ হাজার ১০০।

Leave a Response