ঢাকা শহরে চলা ৮৮ ভাগ রিকশাই অবৈধ। অবৈধ রিকশাগুলোর অপসারণ দাবি করেছে চালকদেরই একটি সংগঠন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনুমোদনহীন রিকশাগুলো রাজধানীর অলিগলিসহ মূল সড়কেও চলে। অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইন না মানা এবং যান্ত্রিক বাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একই রাস্তায় রিকশা চলায় যানজটও বাড়ছে।
রাজধানীতে রিকশা চলাচলের অনুমোদন দেয় সিটি করপোরেশন। এ জন্য করপোরেশন থেকে রিকশার নিবন্ধন নিতে হয় এবং বছর বছর তা নবায়ন করতে হয়। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে নিবন্ধন দেওয়া হয়।
করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা ৮০ হাজার ৪৭৩। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) চলে ৫২ হাজার ৭৫৩ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ২৬ হাজার ৭২০টি। প্রকৃতপক্ষে ঢাকা শহরে মোট কত রিকশা চলে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে পুলিশ, রিকশা মালিক-শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন, সিটি করপোরেশন ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় রিকশার সংখ্যা প্রায় পৌনে ৭ লাখ, যার ৬ লাখই অবৈধ। অন্তত ২৫টি সংগঠন অবৈধ রিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।
গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের প্রতিনিধি সভায় এসব অবৈধ রিকশা উচ্ছেদের দাবি তোলা হয়। পাশাপাশি ৪৩ হাজার রিকশা-ভ্যানের অনুমোদন দাবি করা হয়। এই দাবিতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনটি মানববন্ধনেরও ডাক দিয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি আজাহার আলীর সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী, সহসভাপতি আবদুল মান্নান, ফজলুর রহমান মন্টু, যুগ্ম সম্পাদক মো. রেজাউল করিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অবৈধ রিকশা উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে সভায় বক্তারা বলেন, ২০০১ সালে পুলিশ প্রশাসন, ঢাকা সিটি করপোরেশন, রিকশা মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নতুন করে ৩৫ হাজার রিকশা ও ৮ হাজার ভ্যান গাড়ির নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে পর্যায়ক্রমে রাজধানীতে অবৈধ রিকশার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজধানীর অলিগলির পাশাপাশি মূল সড়কেও এসব রিকশা চলায় যানজট বাড়ে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, গ্রাম থেকে আসা রিকশাচালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাঁরা নিজেদের মর্জিমাফিক রাস্তায় রিকশা চালান। যত্রতত্র রাস্তার এপার-ওপার করেন। এতে অন্য যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, দুর্ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ‘যান্ত্রিক বাহনের সঙ্গে একই রাস্তায় রিকশা চলছে। ভিন্ন গতিবেগের কারণে সব বাহনের গতিই কমে যায়। এতে গাড়ি বেশিক্ষণ রাস্তায় থাকে এবং যানজট তৈরি হয়।’ তিনি বলেন, ‘গণপরিবহন চলে এমন রাস্তায় না চলাই ভালো। প্রধান সড়কে না চলে রিকশা চালাতে হবে পাড়ামহল্লা ও ছোট সড়কে।’
কিন্তু বাস্তবে ভিআইপি রোড, মিরপুর রোড, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউ সার্কুলার রোড, ডিআইটি রোড, রোকেয়া সরণি, টেকনিক্যাল মোড় থেকে মিরপুর ১, প্রগতি সরণি, জহির রায়হান সরণি, নর্থ সাউথ রোডসহ প্রায় সব সড়কেই রিকশা চলছে। অথচ এই সড়কগুলোর প্রতিটিই রিকশার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অধ্যাপক আকতার মাহমুদের মতে, রিকশাই তুলে দেওয়া উচিত। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ‘কায়িক পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে রিকশা চলে, এটা অমানবিক। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত। তবে এই প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে হতে হবে, যাতে এই পেশার সঙ্গে জড়িতরা অন্য পেশায় জড়াতে পারেন। একই সঙ্গে নাগরিকদের চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।’