উনিশটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম হয়ে গেল স্প্যানিশ টেনিস তারকা রাফায়েল নাদালের। রাশিয়ান তারকা দানিল মেদভেদেভকে পাঁচ সেটের রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ে হারিয়ে এবারের ইউএস ওপেন পুরুষ এককের শিরোপা জিতে নিয়েছেন নাদাল। মেদভেদেভকে হারিয়েছেন ৭-৫, ৬-৩, ৫-৭, ৪-৬, ৬-৪ সেটে।
পঞ্চম সেটে ম্যাচ পয়েন্ট পাওয়ার জন্য একটু জোরেই শটটা মেরেছিলেন রাফায়েল নাদাল। সেটা পড়িমরি করে ফেরালেন মেদভেদেভ। কিন্তু শটটা ফেরাতে গিয়ে হিসাবে একটু গড়বড় করে ফেললেন, নির্ধারিত লাইনের মধ্যে না পড়ে বলটা পড়ল বেসমেন্ট সীমানার বাইরে। আর সেটা দেখেই কোর্টে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন নাদাল। ব্যস, তাঁর কাজ শেষ হয়ে গেছে!
হলুদ-কালো র্যাকেটটা পড়ে থাকল পাশে। এভাবেই পড়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। একটু পর উঠে প্রতিদ্বন্দ্বী মেদভেদেভকে আলিঙ্গন করলেন, দুর্দান্ত একটা ম্যাচ উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদই দিলেন বোধ হয়। এর পর মাথার ব্যান্ডটা খুলে দিয়ে আবেগে মুখটা ঢেকে রাখলেন কিছুক্ষণ। আনন্দাশ্রু গড়িয়ে বোধ হয় দু-ফোঁটা। আকাশের দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ দিলেন বোধ হয় ঈশ্বরকে। সর্বসেরা হওয়ার একদম দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়ার উদ্যাপন বুঝি তবে এমনই হয়!
চতুর্থবারের মতো ইউএস ওপেনের পুরুষ এককের শিরোপা জিতলেন রাফায়েল নাদাল। সব মিলিয়ে উনিশটা শিরোপা জেতা হয়ে গেল তাঁর। গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের দিক দিয়ে ইতিহাসের সর্বসেরা পুরুষ টেনিস তারকা রজার ফেদেরারকে স্পর্শ করতে আর মাত্র একটা গ্র্যান্ড স্ল্যামের শিরোপা হলেই হবে তাঁর। যেভাবে খেলছেন, রেকর্ডটা হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
শুরুটা নাদালসুলভই হয়েছিল। কয়েক দিন আগে রজার্স কাপের ফাইনালে এই মেদভেদেভের মুখোমুখি হয়েছিলেন নাদাল। মেদভেদেভকে ‘বেগেল’ দিয়ে হারিয়েছেন ৬-৩, ৬-০ ; সরাসরি সেটে। এবারও অন্তত প্রথম দুই সেটে মেদভেদেভের বিপক্ষে সেই চিরপরিচিত নাদালকেই দেখা গেল। কিন্তু নাদাল কি ঘুণাক্ষরেও জানতেন, এত সহজে তাঁকে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ইউএস ওপেন জিততে দেবেন না মেদভেদেভ!
ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন মেদভেদেভ। ফাইনালে উঠে আসাটা যে ‘ফ্লুক ছিল না, সেটা বোঝা গেছে পরের দুই সেটে। নাদালকে বশ মানিয়ে পরের দুই সেট জিতে নেন ৭-৫, ৬-৪ ব্যবধানে। দুই সেট হেরে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠেন নাদাল। শেষ সেটে নাদালের অভিজ্ঞতা ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞার সামনে আর টিকতে পারেননি মেদভেদেভ। তবে তাঁর আগেই এই দুজন ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘতম ইউএস ওপেন ফাইনাল খেলে ফেলেছেন! ৪ ঘণ্টা ৫১ মিনিট লড়েছেন দুজন।
আর সে লড়াইয়ের শেষটা হয়েছে নাদালের হাসি দিয়ে। এ হাসি সর্বসেরা হওয়ার দোরগোড়ায় যাওয়ার হাসি। এ হাসি ফেদেরারের আরেকটু কাছে চলে যাওয়ার হাসি।