গত বছর তুমুল বিতর্কের মধ্যে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি আর নিজেদের দূতাবাস সেখানে স্থানান্তর করেই থেমে থাকেনি যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনেও তাদের এক ধরনের ‘সম্মতি’ ছিল বলে প্রকাশ পেয়েছে। কেননা, দেশটি এবার বলছে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র আর অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করবে না। যদিও এ ঘোষণার আগে বিষয়টি নিয়ে দেশটি বিপরীত অবস্থানে ছিল।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলন করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এ কথা বলেন।
১৯৭৮ সালের মার্কিন প্রশাসনের নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে পম্পেও বলেন, শান্তির স্বার্থে বেসামরিক এই বসতিকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি হিসেবে চিহ্নিত করার নীতিকে আর এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে না।
তিনি বলেন, কঠিন সত্য হলো, আইনি প্রক্রিয়ায় এ সংঘাতের সমাধান হবে না। আন্তর্জাতিক আইনানুসারে কে সঠিক, কে ভুল, তার বিতর্ক শান্তি নিয়ে আসতে পারে না। এছাড়া ইসরায়েলি বসতিগুলোর আইনগত অবস্থান সম্পর্কে দেশটির আদালতই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
মাইক পম্পেও এও বলেন, পশ্চিম তীরের অবস্থান ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে।
মার্কিন এ পদক্ষেপ ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি- উভয়পক্ষকেই বিদ্যমান সংকটের সমাধানে একসঙ্গে বসার সুযোগ করে দেবে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি ও আরববাসী।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদাইনা বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আইনের ধারা বাতিল করার কোনো যোগ্যতা বা ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। এমনকি কোনো ইসরায়েলি বসতিকে ন্যায্যতা দেওয়ার অধিকারও তাদের নেই।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান আল-সাফাদি টুইটে বলেন, এ বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। যার প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ।
কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণার মাধ্যমে ঐতিহাসিক এক ত্রুটির সমাধান হলো। একইসঙ্গে বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেওয়া হলো।
এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ফরেন পলিসি চিফ ফেডেরিকা মোগেরিনি বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েলি বসতির বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি অপরিবর্তিত থাকবে। আন্তর্জাতিক আইনানুসারে এখানে বসতিস্থাপনের সব কার্যক্রম অবৈধ এবং তা দুই রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি স্থাপনের বিপরীত।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৪০টি বসতিতে ৬০ হাজারের বেশি ইসরায়েলি বসবাস করছেন। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর দেশটি এ অঞ্চলগুলো দখল করে নেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সেখানে বসতি স্থাপন করে।
২০১৮ সালের ০৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেম শহরকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলের তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।