মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে ইতালি ও স্পেনে মৃত্যু হার আগের দিনগুলোর চেয়ে কমতে দেখা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দেশবাসীকে সামনের ‘কঠিন দুই সপ্তাহের’ জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
“অনেক অনেক মৃত্যু হতে যাচ্ছে,” শনিবার হোয়াইট হাউসে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সুরক্ষা উপকরণ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা মেটাতে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও হাসপাতালকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কেবল নিউ ইয়র্কেই আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার পেরিয়ে গেছে, মৃত্যুর সংখ্যা অতিক্রম করেছে সাড়ে তিন হাজার, এ সংখ্যা ভাইরাসটি যে দেশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে সেই চীন থেকেও বেশি।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এ মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ১২ হাজারের বেশি; মৃত্যু ছাড়িয়েছে সাড়ে ৮ হাজার।
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশে মহামারী দাপিয়ে বেড়ালেও ইতালি ও স্পেনে মৃত্যুহার কমার চিহ্নে আপাত স্বস্তি মিলছে।
ইতালিতে শনিবার ৬৮১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দেশটির বেসামরিক সুরক্ষা বিভাগ। ২৩ মার্চের পর দেশটিতে একদিনে এটিই সবচেয়ে কম মৃত্যু, বলছে রয়টার্স।
ইতালিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা গুরুতর রোগী সংখ্যাও কমেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এদিন দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চার হাজার ৮০৫ জন শনাক্ত হয়েছে, সংখ্যাটি গত কয়েকদিনের তুলনায় একটু বেশি।
ইউরোপের এ দেশটিতেই কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। শনিবার পর্যন্ত ইতালিতে ১৫ হাজার ৩৬২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস; আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ২৪ হাজারেরও বেশি বলে জানিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।
মৃত্যু-আক্রান্তের সংখ্যা কমছে স্পেনেও। শনিবার দেশটিতে ৮০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা শুক্র ও বৃহস্পতিবারের চেয়ে কম।
মোট আক্রান্তের সংখ্যায় স্পেন ইতালিকে ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির এক লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে; মৃতের সংখ্যাও ১২ হাজার ছুঁইছুঁই। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশজুড়ে লকডাউনের মেয়াদ আরও তিন সপ্তাহ বাড়িয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।
আক্রান্তের সংখ্যায় জার্মানির পর থাকা ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজার পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন নার্সিং হোমগুলোতে পড়ে থাকা মৃতদেহ যোগ করায় গত কয়েকদিনে দেশটিতে মৃতের সংখ্যায় বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাজ্যেও। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৭০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে আগে থেকে অসুস্ত ৫ বছর বয়সী এক শিশুও আছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখণ্ডে কোভিড-১৯ এ চার হাজার ৩২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।
ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও গত কিছুদিন ধরে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকখানি কমে এসেছিল। শনিবার দেশটি করোনাভাইরাসে মৃতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে চীনে যে আক্রান্তদের পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই হয় বিদেশফেরত, নয়তো তাদের মাধ্যমে সংক্রমিত হচ্ছেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শনিবারও দেশটিতে নতুন ৩০ জন শনাক্ত হয়েছে; আগের কয়েকদিনের তুলনায় এ সংখ্যা বেশি।
এশিয়ার অন্যতম করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৭৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে, তিন হাজার ৪৫২ মৃত্যু নিয়ে মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়েছে দেশটি; এখানে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৭৩৬ জন।
ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ সৌদি আরবে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৩৭০ জন, মৃতের সংখ্যা ২৯ এবং সুস্থ হওয়ার রোগীর সংখ্যা ৪২০।
ইসরায়েল আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ১৮ জন, মৃতের সংখ্যা ৪৬ জন ও সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৪৭৭ জন।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেও করোনা ভাইরাস তার ভয়াল থাবা নিয়ে হাজির হয়েছে। আক্রান্ত-মৃত্যু বাড়ছে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ায়। এদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৪৮৩ জন ও সুস্থ হয়েছেন ৯১৫ জন।
ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার পর দেশটি লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা ভাবছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রোববার সকাল পর্যন্ত ভারতে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।
পাকিস্তানেও এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৮১৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্তের তথ্য দিয়েছে ডন; দেশটিতে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ জনে।