কলকাতা: আসামের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) নামে ভারতীয়দের ওপর অত্যাচার হচ্ছে-এর প্রতিবাদে মাঠে নামছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই অংশ হিসেবে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এবং ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর রাজ্যের জেলায় জেলায় প্রতিটি ব্লকে মিছিলের নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
নেত্রীর মতে, এনআরসির নামে ভারতীয়দের ওপর অত্যাচার করছে কেন্দ্রীয় সরকার। আসামে নাগরিকপঞ্জির তালিকা থেকে যে ১৯ লাখ মানুষ বাদ পড়েছে তাতে বাঙালিসহ এক লাখ গোর্খা জাতির নামও রয়েছে। মূলত গোর্খারা দার্জিলিং বা ওই অঞ্চলের বাসিন্দা। ফলে শুধু বাঙালি নয়, ভারতীয়রাই সমস্যায় পড়ছে এই এনআরসির ফলে।
এর আগে রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক শান্তি-সংহতি ও যুদ্ধবিরতি দিবসে, এনআরসি নিয়ে পথে নেমেছিল বাম দলগুলো। এবার আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আন্দোলনে নামতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এরই অংশ হিসেবে ১২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মিছিল হবে। দমদম চিড়িয়া মোড় থেকে মিছিল যাবে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় পর্যন্ত। পাশাপাশি ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর রাজ্যজুড়ে প্রতিটি ব্লকে মিছিল করার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
শনিবার (৩১ আগস্ট) আসামে এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায়, তাতে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। তবে এর আগে প্রকাশিত এনআরসি তালিকায় বাদ পড়েছিল ৪৩ লাখ মানুষের নাম। তখনও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ায় টুইটারে ভুলে ভরা তালিকা করা হয়েছে উল্লেখ শনিবার ও রোববার পরপর টুইট করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির আত্মীয় থেকে শুরু করে সেনা, আধা সেনা কর্মী, অনেকেরই নাম নেই। পাশাপাশি নাগরিকত্ব হারানো ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে বাঙালিসহ এক লাখ গোর্খা জাতির নাম ওঠেনি।
এছাড়া যখন ৪৩ লাখ মানুষের নাম বাদ পরেছিল ওই সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এটা নিছক রাজনীতির ফায়দা তুলছে বিজেপি। যে-ই ভোট বিজেপির ঝুলিতে নেই তাদেরই এনআরসির নামে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
মমতাসহ গোটা আসামজুড়ে এর প্রতিবাদের জেরে চূড়ান্ত এনআরসির তালিকা পিছিয়ে দিয়ে সময় নিয়ে প্রকাশ করতে বলেছেন দেশের শীর্ষ আদালত। এরপরই গত শনিবার তালিকা প্রকাশ হয়।
তাতে দেখা যায়, বিজেপির ভোট ব্যাংকেই হাত পড়েছে। ওইদিনই মমতা এক টুইট বার্তায় বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই চেষ্টা করা হচ্ছিল, তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে এনআরসি। দেশ ও সমাজের সঙ্গে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করলে এমনটাই হয়।
তবে মমতার পাশাপাশি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর বিরোধীরা, এমনকি আসামের বিজেপির নেতামন্ত্রীরা পর্যন্ত ভুলে ভরা এনআরসি তালিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তবে আপাদত আসামের কেউ-ই নাগরিকত্ব হারাবেন না। তবে এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বারংবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী।
পশ্চিমবঙ্গে তিনি কোনোভাবেই এনআরসি ‘লাগু’ করতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। অবশেষে ‘ভুলে ভরা’ অসমের এনআরসি নিয়ে সেপ্টেম্বরে আন্দোলনের পথে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস।
তবে কলকাতার মিছিলে নেত্রী নিজে থাকবেন কিনা তা নিয়ে কিছু জানা যায়নি।