ভূগর্ভস্থ ‘ফোর্ডো ফুয়েল এনরিচমেন্ট সাইট’ নামে ইরানের দ্বিতীয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পুনরায় চালু করা হয়েছে। এটি চালু করার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র গতকাল সোমবার জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রবিষয়ক নিষেধাজ্ঞায় আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। খবর রয়টার্সের।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সাংবাদিকদের বলেন, সন্ত্রাসবাদে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা রাষ্ট্রটির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সঠিক পরিমাণ হওয়া উচিত শূন্য। আগে থেকেই গোপনীয় হিসেবে পরিচিত ইরানের ফোর্ডোতে পুনরায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কোনো বৈধ কারণ নেই।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক এবং ইরান নিজেই জানিয়েছে, এই মাসে তেহরান সংবেদনশীল স্থানটিতে আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। ২০০৯ সালে প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত জাতিসংঘের পরিদর্শকদের কাছ থেকে ইরান বিষয়টি লুকিয়ে রেখেছিল।
২০১৫ সালে ছয় পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ইরান। ২০১৮ সালের ৪ মে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি প্রত্যাহার করার পর থেকে ইরানও চুক্তি থেকে ক্রমশ নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।
চুক্তিটির মাধ্যমে বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অপসারণের বিনিময়ে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়। চুক্তিতে ফোর্ডোকে পারমাণবিক, পদার্থবিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি কেন্দ্রে রূপান্তর করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
চুক্তি প্রত্যাহার করা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সংস্থাগুলোকে ইরানে কাজ করতে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা মওকুফ করেছে। ফোর্ডোতে কাজ করা রাশিয়ার রোস্যাটম সংস্থাটিও এই ছাড় পাচ্ছে।
পম্পেও বলেছেন, ১৫ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা মওকুফের দিন শেষ হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মাসে জানিয়েছিল, ৯০ দিনের জন্য তারা মওকুফ নবায়ন করেছে।
রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ, লিন্ডসে গ্রাহাম ও লিজ চেনি নিষেধাজ্ঞায় ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আরাক শহরে অবস্থিত ভারী পানির চুল্লির ওপর আরোপিত ছাড় বন্ধ করার আহ্বান জানান তাঁরা। চুল্লিটিতে চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার করপোরেশন কাজ করছে।
সিনেটররা এক বিবৃতিতে বলেছেন, সম্প্রতি নিশ্চিত হওয়া গেছে, ইরান তার ভারী পানির চুল্লির দায়বদ্ধতা লঙ্ঘন করেছে। কাজেই এই ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। ইরানকে ফোর্ডে বা আরাকে তার কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে দেওয়া যাবে না।
আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক কেলসি ডেভেনপোর্ট জানিয়েছেন, সোমবারের এই সিদ্ধান্ত পারমাণবিক চুক্তিকে আরও বানচাল করতে পারে। চুক্তিটি যৌথ সংঘবদ্ধ কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) হিসেবে পরিচিত।
ডেভেনপোর্ট বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে জেসিপিওএর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ, এই চুক্তির আওতায় ইরানকে যে সুবিধা দেওয়ার কথা, সুস্পষ্টভাবে তা খর্ব করা হচ্ছে।
শুক্রবার থেকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে পম্পেও ইরানকে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইরানের শক্তিশালী বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ড সতর্ক করে দিয়েছে, পেট্রলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আন্দোলন না থামালে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে কমপক্ষে শতাধিক ব্যাংক এবং কয়েক ডজন ভবন ও গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পম্পেও বলেন, ‘আমরা সরকার কর্তৃক ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই। বেশ কয়েকজনের হতাহতের খবর পেয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’