দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি::
দোয়ারাবাজার উপজেলার বড়খাল স্কুল ও কলেজে এবারের এসএসসি ও দাখিল ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে।
অভিভাবকদের তোপের মুখে ওই প্রতিষ্ঠানে ৫শ টাকা করে ফিরিয়ে দেওয়ার পরও নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ফি। রক্তচোষার মতো প্রতিবছর ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলেও দেখার যেন কেউ নেই। এছাড়া প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রাতিষ্ঠানিক স্বেচ্ছারিতা এবং নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও দীর্ঘদিনেও কোন প্রতিকার নেই। তিনি চাকুরী করেন দোয়ারাবাজার উপজেলার বড়খাল স্কুল ও কলেজে কিন্তু বসবাস করেন বিভাগীয় শহর সিলেটে।
একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, বড়খাল স্কুল ও কলেজে শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে । পরবর্তীতে বোর্ডের নির্ধারিত টাকা জানতে পারলে তোপের মুখে প্রিন্সিপাল ফেসবুক ঘোষণা দিয়ে ৫শ টাকা করে ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেন।
স্থানীয়রা বলেছেন, প্রতিবছর শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এভাবেই অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়। শিক্ষার্থীরা যেহেতু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তাই ক্ষতি হওয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না।
অভিযোগ আছে, বড়খাল স্কুল ও কলেজে প্রতিবছর এসএসসির ফরম পূরণে প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং কর্মচারীরা সিন্ডিকেট করে ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় করে থাকেন।
সিলেট মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানা যায়, এবছর এসএসসি’র ফরম পূরণে নির্ধারিত ফি হচ্ছে মানবিক ১৪ শ টাকা এবং বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ১৬ শ টকা। এরমধ্যে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২৪শ এবং ২৬শ টাকা করে। এবার বড়খাল স্কুল-কলেজের মোট পরীক্ষার্থী ২শ’৩৩ জন।
বড়খাল স্কুল ও কলেজের হিসাব সহকারী আবুবকর ছিদ্দিক বলেন, এবার প্রতিষ্ঠানে মোট পরীক্ষার্থী ২শ’ ৩৩ জন। তন্মধ্যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের ফি নেওয়া হয় ২৬শ’ টাকা এবং মানবিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২৪শ’ টাকা। এখন ৫শ’ টাকা করে ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
কুশিউরা গ্রামের শিক্ষার্থী অভিভাবক দিন মজুর আবদুল্লাহ বলেন, আমার কাছ থেকে ফরম পূরণের ২৭ শ’ টাকা ফি নেওয়া হয়েছে। পরে জানতে পারলাম বোর্ডের নির্ধারিত ফি মাত্র ষোলো শ টাকা। এমন হলে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাবো কিভাবে?
একই গ্রামের শিক্ষার্থী অভিভাবক ফজলুর রহমান বলেন, আমার ছেলের ফরম পূরণে ২৬ শ’ টাকা নিয়েছেন। অতিরিক্ত ফি নেওয়ার পর আমি প্রিন্সিপাল সাহেবকে বলেছি মানি রিসিট দেওয়ার জন্য কিন্তু তিনি দেননি। সম্প্রতি শিক্ষাবোর্ড আরও তিন বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে না মর্মে ফি কমিয়ে দেওয়ার পরও বোর্ডের নির্ধারিত টাকার চেয়ে ৮শত টাকা অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে।
কিরণপাড়া গ্রামের শিক্ষার্থী অভিভাবক শামীম আহমদ বলেন, আমার দুই বোন এসএসসি পরীক্ষার্থী। বোর্ড নির্ধারিত ফি’র চেয়ে আমার কাছ থেকেও অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য মাওলানা আবদুল মতিন বলেন, অতিরিক্ত ফি আদায়ের ব্যাপারে অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। তবে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। দু-একদিনের মধ্যে জানতে পারবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষ নজির আহাম্মদ বলেন, ফরম পূরণে কেন্দ্র ফি, অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি’সহ একসাথে ২৬শ’ ও ২৪’শ করে নেওয়া হলেও বোর্ডের সিদ্ধান্ত পেয়ে ৫শ’ টাকা করে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। আমি ফেসবুক ঘোষণা দিয়ে ৫শ টাকা করে ফেরত দিচ্ছি। আর ফরম পূরণে কোন মানি রিসিট দেওয়া হয় না, ভর্তির সময় দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেও আপনারা লিখবেন। অন্যরা আমাদের চেয়ে বেশি ফি নিচ্ছেন। লিখলে সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে লিখুন।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজাদুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে দু’জন শিক্ষার্থী ফোনে অবগত করেছেন। অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে জেনেছি, তবে লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ##