আবারও পুলিশের মুখোমুখি হচ্ছেন বিতর্কিত ইসলামি বক্তা জাকির নায়েক। মালয়েশিয়ায় নির্বাসিত এই ভারতীয় নাগরিক বিগত এক সপ্তাহেই দুইবার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যে একবার ১০ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। তবে এবার পুলিশ তাকে তার নিজের করা মামলার ব্যাপারেই জবানবন্দি দেওয়ার জন্য ডেকেছে।
মালয়েশিয়ায় ধর্ম ও জাতিগত ইস্যুকে স্পর্শকাতর বিবেচনা করা হয়। দেশটির ৬০ শতাংশ মানুষ মুসলমান আর বাকিরা চীন ও ভারতের নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এদের বেশিরভাগই সনাতন ধর্মাবলম্বী। সম্প্রতি জাকির মন্তব্য করেছেন, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের চেয়ে মালয়েশিয়ায় থাকা সংখ্যালঘু হিন্দুরা শতগুণ বেশি অধিকার ভোগ করছে। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী হিন্দুরা মাহাথিরের নয়,ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক। এই মন্তব্যের জেরে জাকির নায়েককে মালয়েশিয়া থেকে বের করে দেওয়ার প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। এ ঘটনায় পুলিশি তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে দুইবার পুলিশের জেরার মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।
একই ঘটনায় গত ১৬ আগস্ট দেশটির এক মন্ত্রীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন জাকির নায়েক। তার দাবি, ওই পাঁচজন তার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ উপস্থাপন করে তার ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ আনেন তিনি। সেই জবানবন্দি দিতেই দাতুক আমানের পুলিশ সদর দফতরে যাচ্ছেন জাকির। তার আইনজীবী দাতুক আকবেরদিন আব্দুল কাদেরের দাবি, তাদের ডাকা হয়নি, নিজে থেকেই যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা তারিখ ও সময় দিয়েছি। গত সোমবার পর্যাপ্ত সময় না থাকায় আমরা আবার যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছি।
জাকির নায়েকের মামলায় অভিযুক্তরা হলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ডেনিস ইগনাশিয়াস, কুলাসেগারান, পেনাংয়ের উপমুখ্যমন্ত্রী পি রামাসামি, বাগান দালামের প্রতিনিধি সাতিস মুনিয়ান্দি এবং ক্লাং এর এমপি চার্লস সান্তিয়াগো। এই পাঁচজনও জবানবন্দি দিয়েছেন। কুলাসেগারান বলেছেন তারা আদালতেই বক্তব্য দেবেন। পুলিশকে সহায়তার জন্যও প্রস্তুত তারা।
জাকির নায়েকের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা ওই পাঁচজনকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
ভারতের আদালতে অর্থপাচার ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে জিহাদি কার্যক্রম উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ রয়েছে জাকিরের বিরুদ্ধে। দিল্লির পক্ষ থেকে তাকে ফেরত পাঠানোর আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হলে ২০১৮ সালে মাহাথির এ ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এ বছর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহেও মাহাথির বলেছিলেন, ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জাকির নায়েককে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে না। তবে জুলাইয়ে টিআরটি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আলাপকালে ৯৪ বছর বয়সী মাহাথির বলেছেন, ‘আমাদের দেশ মালয়েশিয়ায় ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের ও ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ আছে। আমরা এমন কাউকে চাই না যাদের বর্ণগত সম্পর্ক ও অন্য ধর্ম সম্পর্কে কট্টর চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে জাকির নায়েককে আবার অন্য কোথাও পাঠানো কঠিন। কারণ, অনেক দেশই তাকে রাখতে চায় না।’