ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমকে আইএনএক্স মিডিয়া দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই।
বুধবার রাতে জোড়াবাগের বাসভবন থেকে তাকে আটক করেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, তার গ্রেফতারির আশঙ্কা ছিল আগে থেকেই। বুধবার ২৭ ঘন্টা পর প্রথম চিদম্বরম প্রথম প্রকাশ্যে আসেন।
রাতে দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দেন। পরে তিনি ফিরে যান বাড়িতে। ওদিকে, তার জোড়াবাগের বাসভবনে পৌঁছে সিবিআইয়ের একটি দল।
দরজা না খোলায় দেওয়াল টপকে বাড়িতে ঢোকে তারা। এর পর নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে দশটা নাগাদ তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আইএনএক্স মিডিয়া প্রতারণা মামলায় চিদাম্বরমকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। জারি করা হয়েছিল লুক আউট নোটিস। চিদাম্বরমের দেশ ছাড়ার ওপরও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। তার মধ্যেই মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে লাপাত্তা ছিলেন চিদম্বরম।
দিল্লিতে চিদম্বরম তার গাড়ির চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফোন বন্ধ করে নিজেই গাড়ি চালিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গিয়েছিলেন বলে খবর পাওয়া যায়। এরপরই বুধবার প্রকাশ্যে আসার পর তিনি গ্রেপ্তার হলেন।
২০১০ সালে ভারতে ইউপিএ সরকারের আমলে প্রথম আইএনএক্স দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে। পরে তা ধামাচাপা পড়ে গেলেও, ২০১৪ সালে সরকার বদলের পর নতুন করে গতি পায় তদন্ত।
২০০৭ সালে চিদম্বরম ভারতের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ‘ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন বোর্ড’ (এফআইপিবি)- এর কাছে বিদেশি লগ্নির আবেদন করেছিল আইএনএক্স মিডিয়া। তাতে লগ্নির টাকা সহযোগী সংস্থাগুলোতেও বিনিয়োগের অনুমতি চেয়েছিল তারা। কিন্তু আইএনএক্স মিডিয়ার লগ্নি এফআইপিবি অনুমোদন করলেও সহযোগী সংস্থায় ওই টাকা বিনিয়োগে সায় দেয়নি। আইএনএক্স মিডিয়া সেই নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করায় এ অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় আয়কর দফতর।
তখনই চিদম্বরমের ছেলে কার্তি চিদম্বরমের কোম্পানির দ্বারস্থ হন আইএনএক্স মিডিয়ার যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা পিটার ইন্দ্রাণী ও অনান্যরা। কার্তি টাকার বিনিময়ে আইএনএক্স মিডিয়াকে ছাড়পত্র পাইয়ে দিয়েছিলেন। গোয়েন্দারা বলছেন, ছেলের সংস্থার হয়ে আইএনএক্সকে ওই অন্যায় সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন চিদম্বরম।
পিটার ইন্দ্রাণীর দেওয়া তথ্যর ভিত্তিতেই পরবর্তীতে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে আগানো গেছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলাকালে গত বছর মার্চে ইন্দ্রাণী ও কার্তিকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করেন সিবিআই গোয়েন্দারা। সেখানে কার্তিকে ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন ইন্দ্রাণী।
পি চিদম্বরম এবং কার্তি অবশ্য শুরু থেকেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাতে, ইচ্ছাকৃত ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগলোকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ তাদের।