কথা ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভার পর গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপির প্রার্থীদের আংশিক তালিকা প্রকাশ করবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু সভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই গুলশান থেকে জানানো হয়, আজ বৃহস্পতিবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হচ্ছে না। জানা যায়, ঐক্যফ্রন্টের বাকি শরিকেরা এককভাবে প্রার্থী ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপিকে ‘ভাবার’ অনুরোধ জানালে দলটি আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

আজ বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আজ রাত আটটার পর দলের চূড়ান্ত প্রার্থীদের আংশিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। গুলশানের বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল মতিঝিলে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে এসে এ জোটের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় যোগ দেন। এখান থেকে ফিরে গিয়েই তাঁর দলের আংশিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার কথা ছিল।

ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, আজকের বৈঠকে আংশিকভাবে বিএনপিকে প্রার্থী ঘোষণার ব্যাপারে ভেবে দেখতে বলা হয়। উপস্থিত নেতারা বিএনপি মহাসচিবকে আংশিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করে একবারে করা যায় কি না, তা ভেবে দেখার জন্য বলেন। এ ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের প্রায় সব আসনের প্রার্থীদের ঘোষণা একবারে করা হবে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, আংশিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু তাতে আপত্তি জানান গণফোরাম নেতারা। মির্জা ফখরুল বৈঠকে জানান, দলের কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের ব্যাপক চাপ। তাই যেসব আসন নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি, অন্তত সেই আসনগুলোর তালিকা প্রকাশ করতে চান তিনি। কিন্তু গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, এতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে। আংশিক তালিকা প্রকাশ না করে পুরো তালিকা একসঙ্গে প্রকাশ করাটাই ভালো হবে। অধিকাংশ নেতা তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এরপর আগামীকাল শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয় থেকে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে আগামীকাল বিকেলে ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জোটের প্রার্থীদের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা। উল্লেখ্য, বিএনপিসহ ২০–দলীয় জোট এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জোটভুক্ত হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে। এ জোটের বাকি শরিক দলগুলো হচ্ছে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, মির্জা ফখরুলকে বলা হয়, তাঁর ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী নিজেদের সুবিধামতো তাঁরা ঘোষণা করতে পারেন। তবে একবারে সব ঘোষণা করলে ভালো হয়। ঐক্যফ্রন্টের সব আসনে প্রার্থী দেওয়া প্রসঙ্গে এই নেতা জানান, ‘৩০০ আসনে ঘোষণা দেওয়া এই মুহূর্তে একটু মুশকিলই। এখনো কিছু বিষয় চূড়ান্ত হয়নি।’
মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আজ ৬ ডিসেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। অনেক প্রার্থীর শুনানি এখন পর্যন্ত বাকি। কিন্তু এর মধ্যেই সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।

শুনানিতে আজ প্রথম দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৮০ জন প্রার্থী। প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন ৫৪৩ জন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে আজ ১৬০ জনের শুনানি হয়। এখনো ৩৮৩ জন প্রার্থীর শুনানি বাকি। এবার বিএনপির সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। অবশ্য তাদের মনোনয়নও বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি।
ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকটি সাড়ে সাতটার দিকে শেষ হয়। এরপরে রাত আটটার পর বিএনপির গুলশান অফিসে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আজ প্রার্থী ঘোষণা হবে না।

সকালেই বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে প্রতীক বরাদ্দের পরের দিন ১০ ডিসেম্বর বেলা দুইটায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে ঐক্যফ্রন্ট। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান। তবে সন্ধ্যায় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে জোটের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ১০ ডিসেম্বরের জনসভা স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিকে এ জনসভাটি হতে পারে। পরে তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া জানান, ১৭ ডিসেম্বর ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।

বৈঠকের কয়েকজন নেতা জানান, ভোটের প্রচার শুরুর দিন অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর থেকে ঐক্যফ্রন্টের কী ধরনের কর্মসূচি হবে, ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে কর্মসূচি কবে কীভাবে করা যায়, সেসব নিয়ে এ বৈঠকে আলোচনা হয়।

Leave a Response