নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে মোটরসাইকেলের হেলমেটের বাজারে এখন সুসময় চলছে। রাজধানীর মোটরসাইকেলের সরঞ্জামের দোকানে হেলমেট বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। এতে খুশি বিক্রেতারা।

অবশ্য হেলমেট বিক্রি ও ব্যবহার বাড়লেও মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। কারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে যেসব হেলমেট বিক্রি হয়, তার সিংহভাগই নিম্নমানের। পুলিশি অভিযানের কারণে নিম্নমানের হেলমেটের বিক্রিই বেশি বেড়েছে। তাই মাত্র ৩০০-৩৫০ টাকায় মিলছে একটি হেলমেট।

বাজারে বিক্রি হওয়া সব হেলমেট বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নির্ধারিত মান অনুযায়ী উৎপাদন ও আমদানি হওয়ার কথা। পাশাপাশি হেলমেটে বিএসটিআইয়ের মানচিহ্ন থাকার কথা। কারণ, এটি বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক মান পরীক্ষার তালিকায় থাকা ১৯৪টি পণ্যের একটি। অবশ্য হেলমেটের মান নিশ্চিতে বিএসটিআইয়ের কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

হেলমেটের আমদানিকারকেরাই বলছেন, নিম্নমানের হেলমেটে বাজার সয়লাব, যা পরিধান করে আসলে বিশেষ কোনো লাভ হবে না। জানতে চাইলে হেলমেট আমদানিকারক এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) পরিচালক মো. আবুল আয়েস খান বলেন, নিম্নমানের যেসব হেলমেটে এখন বাজার সয়লাব, সেগুলো পরার কোনো মানে নেই। কারণ, এগুলো শুধু ট্রাফিক পুলিশের জরিমানার হাত থেকে মোটরসাইকেল মালিককে রক্ষা করে, কিন্তু কোনো নিরাপত্তা দেয় না। তিনি আরও বলেন, হেলমেট উৎপাদনে নির্ধারিত মান অনুসরণ করতে হয়। পরীক্ষার পর তা অনুমোদন পেলে বাজারে ছাড়তে হয়। বাংলাদেশে যেসব হেলমেট আসছে, তার সিংহভাগ নিম্নমানের। ভালো মানের হেলমেট আমদানি করলে তা বিক্রি হয় না।

বিক্রি বাড়ছে
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে ট্রাফিক পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে ঢাকার মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের মধ্যে হেলমেট ব্যবহার বেড়েছে। আগে যেখানে আরোহীর মাথায় হেলমেট দেখাই যেত না, এখন বেশির ভাগ আরোহী হেলমেট পরছেন।

রাজধানীর বাংলামোটরে বেশ কিছু দোকানে হেলমেট বিক্রি হয়। বিক্রেতারা জানান, কয়েক দিন ধরে বিক্রির হার বেশ কয়েক গুণ বেশি। জানতে চাইলে বাংলামোটরের আল-বারাকা মোটরসের মালিক ফজলুল হক বলেন, আগে দিনে দু-একটা হেলমেট বিক্রি হতো। এখন সেটা ১৫-২০টিতে উঠেছে। তিনি বলেন, বেশি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৬০০ টাকা দামের হেলমেট। এসব হেলমেট মূলত আরোহীর জন্য কেনা হচ্ছে। চালকেরা ব্যবহার করেন ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা দামের হেলমেট।

বাজারে হেলমেট বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে মান পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও কোনো হেলমেটে বিএসটিআইয়ের মানচিহ্ন নেই।

বাংলামোটর ও মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বেশ কিছু দোকান ঘুরে দেখা যায়, ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা দামের হেলমেট বেশি। এসব হেলমেট মূলত চীন থেকে আমদানি হয়। এর বাইরে কিছু হেলমেট পাওয়া যায়, যার দাম ২ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এসব হেলমেট থাইল্যান্ড ও চীন থেকে আমদানি হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ১৭ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলারের সেফটি হেডগিয়ার বা হেলমেটজাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। আগের বছর এসব পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৭ কোটি ২২ লাখ ডলার। ফলে আমদানি বেড়েছে ১৪৬ শতাংশ।

Leave a Response