রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর মামলায় জাবালে নূর পরিবহনের ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রভুক্ত ছয় আসামি হলেন- জাবালে নূরের দুই বাসের মালিক শাহাদাত হেসেন ও জাহাঙ্গীর আলম; দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং দুই সহকারী এনায়েত হোসেন ও কাজী আসাদ।

এ বিষয়ে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের মধ্যে বাস মালিক জাহাঙ্গীর এবং চালকের সহকারী আসাদ পলাতক রয়েছেন। এছাড়া অন্য চারজনের মধ্যে মালিক শাহাদাত, চালক মাসুম ও জুবায়ের কারাগারে আছেন। তারা ঘটনার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪, ৩২৩, ৩২৫, ৩৩৪, ২৭৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০৪ ধারায় অভিযোগের বিষয় হল ‘অপরাধজনক নরহত্যা’। অর্থাৎ খুনের উদ্দেশ্য না থাকলেও প্রাণহানি ঘটেছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, জাবালে নূরের দুই বাসের মালিক শাহাদাত হেসেন ও জাহাঙ্গীর আলম চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলপারদের যোগ্যতা বুদ্ধিমত্তা যাচাই না করে অনুপযুক্ত চালক ও হেলপার নিয়োগ দেয়। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট মতে চালক মাসুম বিল্লাহ ও জোবায়ের সুমন ওই বাস দুটি চালানোর জন্য অনুপযুক্ত। এর ফলে চালক ও চালকের সহকারীরা বেশি যাত্রী ওঠানোর লোভে যাত্রীদের কথা না শুনে, তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়কের ঢালের সামনে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ায়। এ সময় স্বেচ্ছায় চালক মাসুম বিল্লাহ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রীদের ওপর বাস উঠিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলে দুজন শিক্ষার্থী মারা যান।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২৯ জুলাই দুপুরে কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিলেন। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় মুখেই দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় পেছন থেকে আরেকটি দ্রুতগতি সম্পন্ন জাবালে নূরের বাস ওভারটেক করে সামনে আসতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিমিষেই উঠে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর। চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুইজন ও আহত হয় ৯ জন।

নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম (১৬)। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই দিন রাত ও পরদিন সকালে রাজধানী ঢাকা এবং বরগুনায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। দুর্ঘটনার দিন থেকে এক সপ্তাহের বেশি সময় রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

Leave a Response