বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারা অভ্যন্তরে ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে সাজা দিতে বেআইনি ভাবে একটি অস্থায়ী আদালত গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন। বিএনপির আইনজীবীদের এই বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেছেন, আইন মেনেই কারাগারে অস্থায়ী আদালত গঠন করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন আজ বৃহস্পতিবার সমিতির মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, এই আদালতটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে স্থাপন করা হয়েছে। সরকার খালেদা জিয়াকে একতরফাভাবে যেনতেন ভাবে বিচার কার্য পরিচালনা করে তাকে শাস্তি দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। সরকারকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে এই গেজেটটি (কারাগারে অস্থায়ী আদালত বসানো) প্রত্যাহার করে উন্মুক্ত আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। অন্যথায় দেশের আইনজীবীরা এ বিষয়ের ওপরে পরবর্তী বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমh বলেছেন, আইন মেনেই কারাগারে অস্থায়ী আদালত গঠন করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ওই মামলাটি করা হয়, বর্তমান সরকার মামলাটি করেনি। সাজা দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার চেষ্টা করছে, এটি ঠিক নয়। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে এমন বক্তব্য আদালতের প্রতি অনাস্থা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কোনো মামলা বিচারের জন্য কোনো স্থানকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা নতুন নয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার বিচার যখন হয়, তখন পুরোনো কারাগারের একটি অংশকে আদালত ঘোষণ করা হয়েছিল। ওই মামলায় বিচার ক্যামেরা ট্রায়াল হবে বা কেউ উপস্থিত থাকতে পারবেন না সরকার বা আদালত এমন ঘোষণাও দেননি। কাজেই এ ব্যাপারে তাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এসব বক্তব্য মামলার বিচারকাজ বিলম্বিত করার জন্যই।
এর আড়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাছে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা নাইকো ও বড়পুকুরিয়া ইত্যাদি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের বিচারকাজ ওই আদালতেই চলছে। …. . নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ওই কোর্ট বা ওই সব বিচারকাজ তো কোনো জেল খানার অভ্যন্তরে স্থানান্তর কিংবা পরিচালনা করা হচ্ছে না। অথচ খালেদা জিয়াকে কারা অভ্যন্তরে ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে সাজা প্রদানের লক্ষ্যে বেআইনি ভাবে একটি অস্থায়ী আদালত গঠন করা হয়েছে। যাতে সাধারণ জনগণ বিচারের নামে সরকারের বেআইনি কার্যক্রম দেখতে বা বুঝতে সক্ষম না হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের যে ৭ নম্বর কক্ষটিকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, তা সংবিধানের ৩৫ (৩) এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫২ ধারা অনুসারে উন্মুক্ত আদালত নয় বা হতে পারে না। সেখানে পাবলিক তো দূরের কথা খালেদা জিয়া ও অন্যান্য আসামিদের নিয়োজিত আইনজীবী, আসামিদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা দলীয় নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার নেতা কর্মীদের প্রবেশ এবং আদালতের কার্যক্রম দেখা বা শোনার কোনো সুযোগ নাই।’ …কারা অভ্যন্তরে গঠিত আদালতটি মোটেই উন্মুক্ত আদালত না হওয়ায় সেখানে পাবলিক ট্রায়াল হওয়ার সুযোগ না থাকায় এমন আদালতে খালেদা জিয়ার মামলার বিচার কার্যক্রম চলার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। এ সময় অন্যদের মধ্যে সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ কার্যনির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।