নিজস্ব প্রতিবেদক: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ২০১২ সালের ২ মে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী সাবেক জামায়াত নেতা ও তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফকে গ্রেপ্তার হলেও
অভিযোগ রয়েছে আবু ইউসুফ এবং তার পরিবার মিলে বর্তমানে আমান নামক এন জি ও (যার রেজিঃ ০৯৮০) এর নামে দেশে ও বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ইসুতে এনে নিজের ইচ্ছে মত করে কার্যক্রম করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
এই আমান দিয়ে দেশে ও বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ইসুতে এনে জামাতের সাবেক নেতা আবু ইউসুফ নিজের মনোনীত লোক এবং পরিবারের সদস্যদের দিয়ে কার্যক্রম পাশাপাশি জঙ্গি অর্থ্যায়ন করছেন বলে জানাযায়। এই কাজে তার সহযোগী তারই নিজ পুত্র শিবির সদস্য আসিফ ও ভায়রার পুত্র।
বাচ্চু রাজাকারকে সহায়তাকারী কীভাবে দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এনজিও চালাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
ঘটনার সময় ২০১২ সালের ৩০ মার্চ। ওই দিন একটি মাইক্রোবাস করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে প্রথমে আগারগাঁওয়ের নিজের বাসায় লুকিয়ে রাখার পর ওই বছরের ২ এপ্রিল হিলি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন আবু ইউসুফ। এরপর কী করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে দেশে শুরু হয় হইচই।
এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে ২০১৫ সাল থেকে আবু ইউসুফ এই আমানকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি নিজেকে আমানের মালিকানা দাবি করে। যা তার ও তার পরিবারের ব্যাংক
একাউন্ট হিসাব দেখলেই প্রমান পাওয়া যাবে। ইসলামী ব্যাংকের রাজধানীর দুটি শাখায় তার লেনদেন চলে। তার হিসাব নাম্বার হচ্ছে abu Yousuf ac no: 362560, farmgate branch,islami bank, aman zakat management ac no: 20502900201105602,panthopath branch islami bank, association gor advance network ac no: 20502900201178016, panthopath branch islami bank bkash 01711485634, nagad 01711485634
জানাযায় যে চাহিদা পত্র দিয়ে আমান দেশে ও বিদেশ থেকে টাকা আনছে সে চাহিদা পত্ৰ আবু ইউসুফ তিন সেট করে রাখেন। যার অন্যমত কারন একসেট দিয়ে জঙ্গি অর্থ্যায়ন, আরেক সেট তার পরিবারের সদস্যদের জন্য আর বাকিটা আমানের লোক দেখানো অডিট কাজে ব্যবহার হয়। একই ভাবে চাহিদা পত্র অনুসারে যখন মামামাল ক্রয় করে তখন ও ক্রয়ের তিন ধরনের রশিদ সংগ্রহ করেন। এভাবে করে পণ্য ক্রয় বাবদ কোটি কোটি টাকা নিজের পরিবার, জঙ্গি অথ্যায়ন করে আসছে আবু ইউসুফ। এই কাজে তার সহযোগী তারই নিজ পুত্র আসিফ ও ভায়রার পুত্রকে কাজে লাগাচ্ছে।
আর সেই টাকা সারাদেশে এনজিও সহায়তার নামে আনসার আল ইসলাম হিন্দাল শারকিয়া সদস্য, পার্বত্য এলাকার কেএনএফ সদস্যদের সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জঙ্গি অর্থ্যায়নের বিষয়টি গোপন রাখার জন্য আমান এন.জি.ও এর ক্রয় কমিটি থাকার পরেও কাউকে কাজে না লাগিয়ে আবু ইউসুফ এবং তার নিজ পুত্র ও ভায়রার পুত্রকে দিয়ে বিদেশী ফান্ডের টাকায় নাম সর্বস্ব পণ্য ক্রয় করে থাকেন। তার মনোনিত কিছু কোম্পানীর প্যাড বানিয়ে সেই প্যাডের পাতাতে নিজে কোম্পানীর পক্ষে স্বাক্ষর করে কোটেশন দিয়ে থাকেন। আবার বাজার যাচাই বাচাই নিজেই করে থাকেন। সর্বশেষ তারই মনোনীত কোম্পানীকে নিজেই কার্যাদেশ প্রদান করেন অডিটে ঠিক রাখার জন্য।
২০১২ সালের গ্রেফতারের সময় এই আবু ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো পিসল্যান্ড কোম্পানির একটি মাইক্রোবাসে করেই বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে সহযোগিতা করেছিলেন।
ওই গাড়িতে ছিলেন বাচ্চু রাজাকারের ছেলে মুহাম্মদ মুশফিক বিল্লাহ জিহাদ, আবু ইউসুফ ও বাচ্চু রাজাকার। এরপর আদালতে নিজের জবানবন্দিতেও তার অপরাধ স্বীকার করেন আবু ইউসুফ। পরে এই অপরাধের দায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন তিনি।
বাচ্চু রাজাকারের পালিয়ে যাওয়ায় সহযোগিতার মামলার এখন কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই মামলা হাইকোর্ট স্টে দিয়েছে। সময়টা সঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবত ২০১৫২০১৬ সালে হাইকোর্ট স্টে করে।’গ্রেপ্তারের সময় আপনি জবানবন্দিতে স্বীকার করেছিলেন বাচ্চু রাজাকারকে আপনি পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।’ উল্লিখিত তথ্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, স্বীকার করেছিলাম।’
‘সে সেময় জামায়াতে ইসলামী আপনার পক্ষে স্টেটমেন্ট দিয়েছিল?’ বলা হলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় দিয়েছিল।
এনজিও পরিচালনা নিয়ে বিস্ময় আবু ইউসুফের এনজিও পরিচালনা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন,‘এই রকম একজন অপরাধী কীভাবে
হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এনজিও পরিচালনা করছে, সেটা অবশ্যই সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন,‘এটা নিয়ে একটা তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্ত হলে জানা যাবে কীভাবে সে এত বড় একটা অপরাধ করেও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং এনজিও ব্যবসা করছে। আমাদের আইনেই আছে,
ফৌজদারি দণ্ডবিধিতেই আছে ক্রাইমকে যে সহযোগিতা করে, ক্রিমিনালকে যে সহযোগিতা করে, সেও সমানভাবে অপরাধী। আবু ইউসুফ বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে সাহায্য করেছে। তাই সেও অপরাধী।’
শাহরিয়ার কবির বলেন,‘যেহেতু এটা যুদ্ধাপরাধের মামলা, তাই এখন ট্রাইব্যুনালকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে হাইকোর্টে এই স্টে কনটেস্ট করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে এটা উঠে যাবে। তখন তাকে গ্রেপ্তার করতে কোনো বাধা থাকবে না।’
এ বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন,‘আবু ইউসুফকে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের
ভিত্তিতে র্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে তিনি সম্ভবত এনজিও ব্যুরোর অনুমতিতেই আবার এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
‘এই এনজিও পরিচালনার মাধ্যমে তার কোন অপরাধের তথ্য যদি গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা এনজিও ব্যুরো পায়, ওই সকল তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’