‘জীবিত মানুষটারে দেখতে চাইলাম, দিলেন না। মৃত মানুষটারেও দেখতে দিলেন না। কবর কোথায় সেটাও বলতেছেন না। আমরা কবর জিয়ারতও করতে পারব না? এটা কোন বিচার, স্যার?’ এবার ঈদে চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত টেলিছবি ‘আয়েশা’র সংলাপ। তিশার এই সংলাপ এখন অনেকের মুখে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত এই টেলিছবিতে তিশা আর চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ‘টেলিছবিটা দেখে কান্না ধরে রাখতে পারিনি।’
কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের উপন্যাস ‘আয়শামঙ্গল’ অবলম্বনে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ঈদের জন্য তৈরি করেছেন টেলিছবি ‘আয়েশা’। প্রচারিত হয়েছে ঈদের পরদিন সন্ধ্যায় চ্যানেল আইয়ে।
পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী ‘আয়েশা’ দেখে বলেছেন, ‘সবাই যখন কোনো কাজের প্রশংসা করে তখন বলতেই হয়, সে কাজের মাঝে কিছু একটা আছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর “আয়েশা” এই সময়ের টেলিভিশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হয়ে থাকবে। আমি দেখে অনুপ্রাণিত, ঈর্ষাও হচ্ছে। আর আমরা সবাই এভাবেই গল্প বলতে চাই, হাজির হতে চাই।’
নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন ‘আয়েশা’ দেখার পর বললেন, ‘গল্প হয়তো বারবার মিলে যায়! সময়ও হয়তো বারবার ফিরে আসে! ধন্যবাদ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে, সময়কে ধরে ফেলার জন্য। অনেক দিন পর টেলিভিশনে এমন ভালো কাজ দেখলাম। তিশা, চঞ্চল চৌধুরী আর শেখ রাজিবুল ইসলাম ভাইকে আরেকটা সালাম।’
‘ঠিক কত দিন যে এমন একটা কাজ দেখিনি, টেলিভিশনে কি সিনেমায়, মনেও পড়ে না! এটি প্রেক্ষাগৃহে প্রচারিত হলে দর্শক বলবেন “লম্বা একটা টেলিছবি দেখলাম!” ভুলটা আসলে নির্মাতাদের, না দর্শকের জানি না! টিভি পর্দায় এসব গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র বিনে পয়সায় দেখে ফেলার কারণে, টাকা দিয়ে টিকিট কেটে যখন কেউ প্রেক্ষাগৃহে যান, তখন হয়তো সিনেমার নামে উদ্ভট কিংবা তাজ্জব কোনো বস্তু প্রত্যাশা করেন! “আয়েশা” দেখার পর মনের গুমোট খুলে অনেক কিছু বলে ফেলতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু কথা গুছিয়ে উঠতে পারছি না! মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আপনাকে টুপি খোলা অভিবাদন। আর তিশা আর চঞ্চল চৌধুরী অভিনয়কে এমন একটা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে ছোট একটা ধন্যবাদ খুব কম হয়ে যায় !’ বললেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল।
নির্মাতাদের বাইরে সাধারণ দর্শকও এই টেলিছবি দেখে আবেগাপ্লুত হয়েছেন। ইউটিউবে টেলিছবিটি আপলোড করার পর অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করেছেন। শাখাওয়াত হোসেন নামের একজন বলেছেন, ‘দু ফোঁটা পানি ঝরে পড়ল শেষে! কাহিনি, অভিনয়, পরিচালনা—দশে মিলে যে একটি জীবন তৈরি করতে পারে, আজ তার প্রমাণ পেলাম।’ মফিজুল ইসলাম লিখেছেন, ‘লাশটা কখন পাব, কেমনে পাব? লাশটা দেখতে দিলেন না। আমি ওর স্ত্রী, আমাকেও দেখতে দিলেন না। এই সংলাপ শোনার পর দু-চোখ বেয়ে পানি পড়া শুরু করল। আয়েশাদের জীবনটা এমন হয়তো। ধন্যবাদ নাট্যকারকে।’ ‘আয়েশা’র মতো টেলিছবি যদি অনেক বেশি নির্মিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ আর ভারতীয় সিরিয়াল দেখবে না, এমনটাই মনে করেন ওবায়দুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এ ধরনের নাটক বা টেলিছবি বাংলাদেশের চিত্র পাল্টাতে অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারত।’ বুবন দাশের মতে, ‘দারুণ অভিনয়, চমৎকার আবহসংগীত, গল্প, চিত্রনাট্য, চিত্রগ্রহণ, নির্দেশনা এক কথায় অসাধারণ! সত্যিই প্রশংসনীয় কাজ। অনেক অনেক অভিনন্দন নাটকের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের।’