বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মাদক একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। বাংলাদেশও এর ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত নয়। দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখেরও বেশি। যা রীতিমত ভীতির সঞ্চার করে। মাদকসেবীর দেহমন, চেতনা, মনন, প্রেষণা, আবেগ, অনুভূতি সব কিছুই মাদকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তাই মাদকসেবীর চিকিৎসায় সাইকোথেরাপি (কাউন্সেলিং) একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। আজ বুধবার এসোসিয়েশন অব থেরাপেউটিক কাউন্সেলর, বাংলাদেশ (এটিসিবি) এর উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা. মিলন হলে অনুষ্ঠিত এটিসিবি-র ১১তম বার্ষিক সাধারনসভা ও বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিএসএমএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ এবং এটিসিবির প্রেসিডেন্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্য দেন বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় মানসিক ইন্সটিটিউট হাসপালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা, মুহিত কালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলিং সাইকোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেহজাবীন হক। স্বাগত বক্তব্য দেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবদুস সালাম।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মরোগবিদ্যা বিভাগের সহাকরী অধ্যাপক এসএম আতিকুর রহমান এবং সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা জোহরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন মানুষের শারীরিক এবং মানসিক দিক দুটোইঠিক থাকতে হবে। একটি খারাপ হলে অপরটির উপর প্রভাব ফেলবে। তাই শরীরিক রোগের পাশাপাশি মানসিক রোগের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। অনুষ্ঠানে সাইকোথেরাপির জন্য জায়গা বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেন ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ।
অনুষ্ঠানে, এটিসিবি সেক্রেটারী জেনারেল এবং বিএসএমএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সাইকোথেরাপি উইং-এর প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন, বয়সভেদে সংস্কৃতিভেদে, আর্থসামাজিক সীমা ভেদে নিত্যনতুন মানসিক চাপ মানুষের মনোজগতে প্রভাব ফেলছে। এর প্রভাব পড়ছে সমাজে। এর কারণে শারীরিক মানসিক রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। মাদকাসক্তির পাশাপাশি বিহেভিয়রাল এডিকশন যেমন মোবাইল, নেট, গ্যাজেট আসক্তি বেড়ে গেছে ভয়াবহ আকারে। ২৬ শে জুন মাদকবিরোধী দিবস। এরই আলোকে এবারেরর সায়েন্টিফক সেশনের থিম স্থির করা হয়। যার প্রতিপাদ্য ‘থেরাপিউটিক ইন্টারভেনশন অফ ডাগ অ্যান্ড বিহেভেয়িরাল এডিকশন’।
তিনি বলেন, মানসিক রোগের চিকিৎসায় ফার্মাকোথেরাপীর পাশাপাশি সাইকোথেরাপী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। সাইকোথেরাপী উইং মনোরোগদ্যিাবিভাগ থেকে ৬ মাসের সাইকোথেরাপী ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে ২০০৭ সাল থেকে। প্রতি বছর ১৫জন স্টুডেন্ট এই ট্রেনিং নিচ্ছে। সাইকিয়াট্রিষ্ট, সাইকোলজিষ্ট, থেরাপিউটিক কাউন্সেলরাই এই এসোসিয়েশনের (এটিসিবি) সদস্য। আজকে এই এসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০০ । সমাজের বিভিন্ন স্তরে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে সকলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মানসিক ব্যাধি সম্পর্কে এখনও আমাদের দেশে নানাবিধ কুসংস্কার প্রচলিত। এজন্য বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার পরিবর্তে মানসিক রোগের জন্য চলে নানা অপচিকিৎসা। মানসিক রোগের প্রতি স্টিগমার কারণে মানসিক রোগীদের পরিবারও দূরে ঠেলে দেয়। এমন একটি অবহেলিত ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অংশীদারিত্বেও পাশাপাশি মানসিক রোগের ব্যাপারে জনসচেতনা সৃষ্টিতে এটিসিব-এর ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
মনোরোগ চিকিৎসা মূলত একটি টিম ওয়ার্ক। যাতে মনোচিকিৎসক কাউন্সিলর, সমাজকর্মী, পরিবার প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে। এই সমন্বিত প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এটিসিবি চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সমাজকর্মী এবং সুধীজনকে তাদের সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত করেছে। তাদের এই সমন্বিত উদ্যোগে মনোরোগের চিকিৎসা আরও বেগবান হবে বলে আশা করা যায়।
এটিসিবির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এটিসিবি সকল মানসিক স্বাস্থকর্মীদের জন্য একটা উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় রোগীদের স্বাস্থ সেবা, গবেষণা, জ্ঞানের চর্চ সহ মনোসামাজিক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস থাকে সব সময়ই। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমরা একবার সীমিতপরিসরে অনলাইনে এটিসিবি-র বার্ষিক সাধারন সভা ও বৈজ্ঞানিক অধিবেশন উদ্যাপন করেছিলাম। বিরতি দিয়ে এবারে আমরা এক সাথে অফলাইনে সরাসরি এই সভা ও অধিবেশন পালন করছে। এটিসিবি-র এ অনুষ্ঠানটি সকল সদস্যদের জন্য একটা মিলনমেলা।

Leave a Response