সয়াবিন নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে রাইস ব্র্যান ও সরিষার তেলের উৎপাদন বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বুধবার দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির সভায় তিনি বলেন, “আমাদের বার্ষিক চাহিদার ৯০ শতাংশ ভোজ্যতেল আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করতে হয়। পাম তেল ও সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় জোগানের রাইস ব্র্যান ও সরিষার তেল উৎপাদন বাড়ানো যায় কিনা, বৈঠকে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
দেশে এখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন হয় এবং এটি ‘খুব সহজেই’ ৭ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব বলে জানান মন্ত্রী।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “সেক্ষেত্রে রাইস ব্র্যানের সুফল সম্পর্কে প্রচার করতে হবে। ডাক্তার সাহেবদের এ নিয়ে কথা বলতে হবে। পাশাপাশি সরিষার উৎপাদন বাড়ানোর সম্ভাবনার কথাও কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।”
মহামারীর মধ্যে ভোজ্য তেলের বাজারে যে অস্থিরতার শুরু হয়েছিল, তিন মাস আগে ইউক্রেইন যুদ্ধের পর তা আরও চড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ভোজ্য তেল আমদানির ভ্যাট ও শুল্ক কমিয়ে আনা হয়।
তাতে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হলেও ঈদের আগে খুচরা বাজার থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় সয়াবিন তেল। এরপর সরকার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়ালেও আগের তেল অনেক ব্যবসায়ী মজুদ রেখে বাড়তি দরে বিক্রি করছেন বলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে প্রকাশ্য হয়।
এই পরিস্থিতিতে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর বিষয়টি আলোচনায় আসছে। সয়াবিনের বিকল্প হিসাবে রাইস ব্র্যান ও সরিষার তেল উৎপাদন বাড়ানোর কথা ভাবতে শুরু করেছে সরকার।
বুধবারের বৈঠকে ভোজ্য তেল ছাড়াও পেঁয়াজ, গম ও লবণের মূল্য এবং সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
টিপু মুনশি বলেন, “খবর রটেছে যে, ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করেছে। কিন্তু আমি হাই কমিশনের সাথে আলাপ করে জেনেছি- বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি বন্ধ হয়নি।
“জিটুজি ভিত্তিতে আমদানি চালু রয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশি কোনো ব্যবসায়ী আমদানি করতে চাইলে সেই সুযোগ করে দেওয়া হবে।”
এ ছাড়া দেশে গমের বর্তমান যে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে সহসা কোনো সংকট হওয়ার কথা নয় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এর বাইরে বড় পরিমাণের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এখন আমাদের ভাবনার বিষয় হচ্ছে, আমরা কত দামে পেঁয়াজ খাব।
“কৃষকদের ও কিছু প্রণোদনা দিতে হবে তাহলে তারা উৎপাদন বাড়াবে। গতবছর কৃষক পেঁয়াজের ভাল দাম পেয়ে এবার আড়াই লাখ টন উৎপাদন বাড়িয়েছে।”
পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এখন আমদানি অনুমোদন বন্ধ করা আছে। প্রয়োজন হলে সেটা চালু করে দেওয়া হবে।”
প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে লবণের দাম বেশি বলে বৈঠকে আলোচনা উঠলে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করা হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবেলায় সবাইকে মিলেমিশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএইএম সফিকুজ্জামান, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান ও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।