প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের চৌমোহনী এলাকার কঁচা নদীতে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন ব্রিজের দুইটি গার্ডার ভেঙে পড়েছে নদীতে। ফলে এ বছরের শেষের দিকে যেটি উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল সেটি হবে না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্রীজ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে গার্ডার স্থাপন করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ১৪ আগষ্ট শনিবার এটি ভেঙ্গে পড়ে।
তবে ঠিকাদারই প্রতিষ্ঠান ওটিবিএলের মালিক এম এস আলম বলেন, তার যৌথভাবে কোহিনুর নামের অপর আরেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেন। এটি তাদের দ্বায়িত্ব। এ বিসয়ে তিনি কিছু জানেন না।
তবে তার ছেলে রিফাত আলম বলেন, এটি একটি নিছক দূর্ঘটনা। গার্ডার দুটি সঠিকভাবে প্লেসমেন্ট না হওয়ার কারণে ভেঙ্গে পড়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি বছরের শেষ নাগাদ উদ্বোধন করা যাবে কি না এটি নিশ্চিত বলা যাচ্ছেনা। এই গার্ডার তৈরীর বিল সরকারীভাবে দেয়নি। এটি আবার তৈরী করে স্থাপন করতে হবে।
সূত্র মতে, ব্রীজের মাঝ খানের ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি গার্ডার বিকট শব্দে ভেঙে নদীতে পড়ার ঘটনায় একজন শ্রমিক আহত হয়েছে।
এলজিইডি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিল আটকে দেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ১৪ আগষ্ট দুপুরে বিকট শব্দে ব্রীজের দুটি গার্ডার ভেঙে নদীতে পরে যায়। এসময় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। নির্মাণ কাজে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও স্থানীয়রা উল্লেখ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কঁচা নদীর ওপর ৬ হাজার তিনশ’ মিটার চেইনেজে ৪০৫ মিটার পিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এলজিইডি বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে ব্রিজ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ণের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওটিবিএল। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দুটি গার্ডার ভেঙে পরায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্রিজটি হস্তান্তর করতে পারছেন না।
ওটিবিএল কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম জানান, প্রতিটি পিলারের মাঝে ৪৫ মিটার করে পাঁচটি গার্ডার স্থাপন করা হয়েছিল। মাঝ বরাবর ক্রেনের মাধ্যমে একটি গার্ডার সরাতে গিয়ে যান্ত্রিকত্রুটির কারণে দুটি গার্ডার ভেঙে নদীতে পরে যায়। এটি দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, গার্ডার দুটি ভেঙে পড়ার পেছনে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কোন গাফেলতি নেই। এটার সম্পূর্ণ দায়ভার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। নিয়ম অনুযায়ী গার্ডার ঢালাই থেকে শুরু করে লিফটিং এন্ড সিফটিং করার সময় অবশ্যই বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। তাদের উপস্থিতিতেই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে হবে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমাদের কিছু না জানিয়েই ব্রীজ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারই প্রতিষ্ঠান ওটিবিএল নিম্নমানের সামগ্রি দেয়ার কারনেই এলজিইডিকে জানায়নি। কাজের মান নিরুপন করতে কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিধান থাকলেও তা তারা মানেন নি। নিম্নমানের সামগ্রি দিয়ে যেন তেন ভাবে কাজ উঠানোর জন্যই তারা এ চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে জানিয়ে তাদের উপস্থিতিতে কাজ করলে এ দূর্ঘটনা ঘটতো না। সময়মত প্রধানমন্ত্রী ব্রিজটি উদ্বোধন করতে পারতেন পাশাপাশি এলাকাবাসী ব্রিজটি ব্যবহার করতে পারতো।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ওটিবিএলের স্বত্বাধিকারী এম এস আলমের ছেলে রিফাত আলম বলেন, এটি দূর্ঘটনা। কোন নিম্নমানের সামগ্রি ব্যবহার করা হয়নি।