নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা এলেও চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল।
করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটির টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর তিনি এই পূর্বাভাস দেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সর্বশেষ আট মাসের যে অর্জন তার ভিত্তিতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বলেছে, আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি গ্রোথ রেট এবছর হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
“আমি মনে করি, যদি সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলে তাহলে এ বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি ইনশাল্লাহ ৮ শতাংশের কাছাকাছি হবে।”
সরকারের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল।
তবে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক সমীক্ষায় আশংকা করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, মহামারী ভালো করে সামাল দিতে পারলে এবার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।
প্রায় এক যুগ আগের বিশ্বমন্দার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার মহামারীর কারণে আসন্ন মন্দা মোকাবিলায় আগেভাগেই দ্রুত প্রণোদনা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন, তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা বৃহৎ শিল্প ও সেবাখাত এবং ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্বল্পসুদে ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে।
মোস্তফা কামাল বলেন, ‘খারাপ পরিস্থিতি সেটা এক সময় কেটে যাবে এবং সেটা কেটে গেলে আমরা যাতে দ্রুত আবার আগের অবস্থানে চলে আসতে পারি এবং প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি- এজন্য আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। আর আমাদের যেহেতু মুদ্রাস্ফীতি ৫ শতাংশের ঘরে আছে, আমার আশা এই সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।”
তিনি বলেন, এই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দেশের সবাই থাকবেন, কেউ বাদ যাবেন না। তার সঙ্গে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকায় অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত থাকবে।
“যদি পরিস্থিতি প্রলম্বিত না হয় আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। আর এই অবস্থায় আমরা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে যেতে পারব না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এখানে আছেন তিনি বিষয়টি দেখবেন। আমাদের অনেক নমনীয়ভাবে এখন সবকিছু দেখতে হবে।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষক থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি পেশার মানুষ প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল পাবে। কলকারখানা-সেবা খাত সব প্যাকেজের আওতায় থাকবে।
“এ প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে আমরা যেসব জায়গায় পিছিয়ে ছিলাম সে জায়গাগুলো পূরণ হবে।”
করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রবৃদ্ধির হার বেশ ভালো ছিল, রেমিটেন্স আসার হার ভাল ছিল এবং রাজস্ব আহরণের হারও ভাল ছিল। শুধু রপ্তানি ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম।
“তবে রেমিটেন্সে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটা আমাদের রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়টিকে কাভার করবে।”