ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলে সরকারের পদক্ষেপ পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশটির উচ্চ আদালত। সরকারের এই পদক্ষেপের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নেওয়া আবেদনের ওপর আজ বুধবার শুনানি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানান, অক্টোবর মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন।
এদিকে কাশ্মীরে সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা পুনরায় চালু এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের ওপর আবেদনের শুনানিতে আদালত কেন্দ্রীয় সরকার এবং জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনকে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছেন।
এনডিটিভি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে কয়েকটি আবেদন জমা পড়ে। সব আবেদন আদালত পাঁচজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত সংবিধানিক বেঞ্চে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। এই বেঞ্চের নেতৃত্ব দেবেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
আজ শুনানিতে বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি এবং কাশ্মীরি এক শিক্ষার্থীকে মা–বাবার সঙ্গে দেখা করতে কাশ্মীরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘পর্যালোচনার জন্য আবেদন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো হবে।’এ সময় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আন্তসীমান্ত প্রতিক্রিয়া হবে’ উল্লেখ করে দেওয়া যুক্তি খারিজ করে দেন।
সরকারের পক্ষে শীর্ষ আইনজীবী বলেন, আদালত যা বলেছেন, তা ইতিমধ্যে জাতিসংঘের কাছে পাঠানো হয়েছে। দুই পক্ষের আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি যুক্তি উপস্থাপন করলে বিচারপতি এস এ বোবদে এবং এস এ নাজির বলেন, ‘আমরা জানি আমাদের কী করতে হবে, আমরা নির্দেশ দিয়েছি, আমরা তা পরিবর্তন করছি না।’
কাশ্মীরে সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা যেন পুনরায় চালু হয় এবং গণমাধ্যম
স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে—এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কেন্দ্রীয় সরকার
এবং জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনকে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছেন।
কাশ্মীর
টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন তাঁর এ আবেদনে যোগাযোগ–সংযোগ
দ্রুত চালুর দাবি জানান। তিনি কাশ্মীর এবং জম্মুর কয়েকটি জেলায় গণমাধ্যম
ব্যক্তিদের ঘোরাফেরার ওপর সব ধরনের বাধা শিথিলের ওপর জোর দেন। তিনি অভিযোগ
করেন, এসব বাধার কারণে তিনি কাশ্মীর টাইমসের স্থানীয় সংস্করণ প্রকাশ করতে
পারছেন না।
৫ আগস্ট সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করে। সরকার জানায়, জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভাব্য বিক্ষোভের আশঙ্কায় সরকার কাশ্মীরে কারফিউ জারি করে এবং টেলিযোগাযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫০ হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়। বড় আকারে লোকজনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। চার শর মতো রাজনৈতিক নেতা–কর্মীকে বন্দী করা হয়। কাশ্মীরের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কবে মুক্তি দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে কিছু জানায়নি সরকার।
জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের এসব পদক্ষেপের ব্যাপক সমালোচনা করছে বিরোধী দলগুলো। কাশ্মীরের উদ্দেশে রওনা হওয়া রাহুল গান্ধীসহ বিরোধী দলের নেতাদের একটি গ্রুপকে গত শনিবার বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়।