বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট দলের খেলোয়াড়দের ইডেন গার্ডেনসে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলীর আমন্ত্রণে রোমাঞ্চ নিয়ে কলকাতায় পৌঁছে গেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল শাহরিয়ার রোকন ছাড়া বাকি সবাই। সংবর্ধনা নিতে যাওয়া প্রত্যেককে ব্লেজার, শার্ট ও ট্রাভেল টি-শার্ট উপহার দিয়েছে বিসিবি।
বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট খেলেছিল ভারতের বিপক্ষে, ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে ভারত বাংলাদেশে এসেছিল একমাত্র টেস্ট খেলতে। ওই ম্যাচ দিয়ে টেস্টে অধিনায়কত্ব শুরু করেন তিনি। ১৯ বছর পর এখন গাঙ্গুলী ভারতীয় ক্রিকেটের প্রধান, তার উদ্যোগে প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার স্বাদ পাচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ। এমন ঐতিহাসিক দিনে তিনি ভুলতে পারেননি নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের ওই দলকে। পুরো দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কলকাতায়। এই উপলক্ষ পেয়ে রোমাঞ্চিত সাবেক এই ক্রিকেটাররা।
অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক দুর্জয় এই আয়োজনে উচ্ছ্বসিত। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এটা তো ভালো একটা উপলক্ষ। অভিষেক টেস্ট খেলা সবার সঙ্গে খুব একটা দেখা হয় না। এই সুযোগে সবার সঙ্গে দেখা হবে, এজন্য ধন্যবাদ বিসিসিআইকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একসঙ্গে কলকাতা টেস্টের ঘণ্টা বাজাবেন। সেটাও অনেক সুন্দর একটা ব্যাপার হবে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আশা করবো, কলকাতা টেস্টে বাংলাদেশ ভালো করবে।’
সাবেক অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান জাবেদ ওমর বেলিম ধন্যবাদ দিয়েছেন গাঙ্গুলীকে, ‘খুব ভালো লাগছে। অনেকটা পুনর্মিলনীর মতো হতে যাচ্ছে এটা। আমাদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সৌরভকে ধন্যবাদ।’
সাবেক বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক এই আয়োজনকে গাঙ্গুলীর উদারতা আখ্যা দিলেন, ‘ভারত যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কত বড় বন্ধু- এই আয়োজনে মাধ্যমে আবারও তা প্রমাণ হলো। সৌরভের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। অনেকদিন পর তার সঙ্গে দেখা হবে, উত্তেজনা কাজ করছে আমার মধ্যে।’
এভাবে সম্মান দেওয়ায় খুশি সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট, ‘২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলেছি। ওই ম্যাচের কথা খুব ভালো করেই মনে রেখেছে সৌরভ, তাই আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ধন্যবাদ তাকে ও ভারতের বোর্ডকে।’
কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে কখনও খেলা হয়নি মিস্টার ফিফটি খ্যাত হাবিবুল বাশার সুমনের। খেলা তো দূরের কথা, দেখাই হয়নি। এবার সেই আক্ষেপ দূর হচ্ছে জানালেন তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে, ‘অসাধারণ আয়োজন। একটা টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে, সেখানে অভিষেক টেস্টের সবাইকে ডাকা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক সম্মানের, এমনটা কিন্তু সবাই করেও না, দেখায়ও না। রোমাঞ্চিত আমরা সবাই, সবার সঙ্গে দেখা হবে। অনেক ধন্যবাদ দিতে চাই সৌরভকে। সবচেয়ে বড় কথা, আমার স্বপ্ন ছিলো ইডেন গার্ডেনসে খেলবো। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখারও সুযোগ হয়নি। সৌরভ এবার এই সুযোগ করে দিলো। গোলাপি বলে প্রথম টেস্ট দেখবো, ভাবতেই ভালো লাগছে।’
রাজিন সালেহর মনে উঁকি দিচ্ছে সেই ১৯ বছর আগের স্মৃতি, ‘সত্যি কথা, দারুণ রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, ১৯ বছর আগে ফিরে যাচ্ছি। সবাই মিলে আমরা মাঠে নামবো, এমন অনুভূতি হচ্ছে।’
সাবেক পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘ভালো লাগছে, সবার সঙ্গে সবার দেখা হবে, কথা হবে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের নতুন যুগের যাত্রা শুরু হচ্ছে। সেই যাত্রায় মুশফিকদের সমর্থন জানাচ্ছে অভিষেক টেস্টের দলটি। এটা তো ভালো লাগারই ব্যাপার।’
ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুও উচ্ছ্বসিত এবং বাংলাদেশ ভালো করবে আশাবাদী, ‘১৯ বছর আগে মাঠে লড়াই করেছি। আজ গ্যালারিতে এই প্রজন্মের জন্য একসঙ্গে গলা ফাটাবো। ওদের হাত ধরেই আমাদের টেস্ট ক্রিকেট এগিয়ে যাবে। আশা করি, ইন্দোরের হতাশা কলকাতায় দূর করতে পারবে বাংলাদেশ।’
সংবর্ধনা নিতে আসা সাবেক ক্রিকেটাররা: নাঈমুর রহমান দুর্জয়, শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, মেহরাব হোসেন অপি, জাভেদ ওমর বেলিম, আকরাম খান, খালেদ মাসুদ, মোহাম্মদ রফিক, হাসিবুল হোসেন শান্ত, রাজিন সালেহ, ফাহিম মুনতাসির, মাহমুদুল হাসান রানা, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, হাবিবুল বাশার সুমন ও এনামুল হক মনি।