ভারতে মহাকাশ যান চন্দ্রযান-২ চাঁদের বুকে অবতরণের আগমুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে ভেঙে পড়েছেন ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) বিজ্ঞানীরা। ইসরোর প্রধান বিজ্ঞানী ড. কে শিবন কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবেগে তাঁকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ছবি ছড়িয়ে পড়ল সবখানে।
আজ শনিবার সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য ইসরোয় হাজির হন মোদিসহ দেশটির কয়েকজন রাজনীতিবিদ। মোদি ইসরোর প্রধান বিজ্ঞানী শিবনসহ অন্যদের সান্ত্বনা দিয়ে তাঁদের সাহসী অভিযানের প্রশংসা করেন। চাঁদের মাটি ছোঁয়ার আগে ল্যান্ডার ‘বিক্রমের’ সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরই হতাশা ছড়িয়ে পড়ে ইসরোয়। পাশে বসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব বিজ্ঞানীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘পাশে আছি আমি, হতাশ হবেন না। এ ব্যর্থতায় আমরা পিছিয়ে পড়িনি। ভেঙে পড়ার কিছু নেই। বিশ্বাস রাখুন নিজেদের ওপর, এগিয়ে যান। দেশ আপনাদের জন্য গর্বিত। শিগগিরই আমাদের সুসময় আসবে।’
মনোবল ভেঙে যাওয়া বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে মোদি বলেন, ‘চাঁদে যাওয়ার জন্য আমাদের মনোবল আরও দৃঢ় হলো।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াব। আরও ভালো কিছু করে দেখাব। আর এ কারণেই আমাদের সভ্যতা এত উঁচুতে পৌঁছেছে।’
ভারতের মহাকাশবিজ্ঞানীদের উদ্দেশে মোদি বলেন, ‘এই যাত্রা ও প্রচেষ্টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি গর্ব করে বলতে পারি, প্রচেষ্টা ভালো ছিল বলেই চাঁদে যাত্রা সম্ভব হয়েছে। আমাদের কর্মীরা অনেক পরিশ্রম করেছেন, অনেক পথ পাড়ি দিয়েছেন, যা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। এ শিক্ষা থেকে আজ থেকে আমরা আরও দৃঢ় ও উন্নত হব।’
ভাষণ শেষে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে সৃষ্টি হয় আবেগঘন এক মুহূর্তের। আবেগে ইসরোর প্রধান কে শিবনকে নিজের বুকে টেনে নেন মোদি। শিবন এ সময় কেঁদে ফেলেন। পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিতে থাকেন মোদি। এ সময় চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে মোদিরও।
একেবারে শেষ মুহূর্তে ‘চন্দ্রযান-২’–এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ইসরোর। বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি মহাকাশবিজ্ঞানীরা। চূড়ান্ত অবতরণের আগে ওই রোবোটিক গবেষণা যান চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়েছে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। ইসরোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একবারে শেষ মুহূর্তে বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এটি নামার কথা ছিল।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া চন্দ্রজয় করেছে। তবে তা চাঁদের অন্য অঞ্চলে। ভারতের নভোযান চাঁদে অবতরণ করলে তারা চন্দ্রজয়ী চতুর্থ দেশ হিসেবে তালিকায় উঠে আসত। এটিই হতো চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া প্রথম নভোযান।
এ অভিযান পরিচালনা করতে ভারতের ব্যয় হয়েছে এক হাজার কোটি রুপি। এ অর্থ এর আগে পরিচালিত যেকোনো দেশের চন্দ্রাভিযানের খরচের তুলনায় বহুগুণ কম। ইসরো বলছে, একই ধরনের অভিযানে মার্কিন সংস্থা নাসার ২০ গুণ অর্থ খরচ হয়ে থাকে।
গত ২৩ জুলাই অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় চন্দ্রযান-২। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় এক মিনিটের মধ্যে সেটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। তার এক সপ্তাহ আগে প্রথমবারের উৎক্ষেপণ বাতিল হয়। তথ্য: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি