ঢাকা: বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সব ধর্মের মানুষের সমান নাগরিক সুবিধা ভোগ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সবাই সমান সুযোগ পাবে এবং সেটা আমরা নিশ্চিত করি।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) গণভবনে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টসহ হিন্দুধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশে সবার সমান নাগরিক সুবিধা পাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে বলবো নিজেদের সংখ্যালঘু না বলার জন্য। এই মাটি আপনাদের, এই দেশ আপনাদের, এই জন্মভূমি আপনাদের। কেন নিজেদের মধ্যে এই বিশ্বাস থাকবে না।
তিনি বলেন, অন্তত আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে কখনও আমরা ওই রকম ব্যবধান করে দেখি না। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সবাই উপযুক্ত হলে সমান সুযোগ পাবে। সেটা আমরা নিশ্চিত করি। এদেশে সবার সমান অধিকার রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা শুনি, আমার কাছে খারাপ লাগে আপনারা নিজেদের কেন এভাবে খাটো করে দেখবেন। বাংলাদেশ আমাদের সবার।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, যখন মহান মুক্তিযুদ্ধে সবাই অংশগ্রহণ করেছে, যখন বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, এক ভাইয়ের রক্ত আরেক ভাইয়ের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে, সেই রক্তকে ভাগ করতে যাইনি, ভাগ হতে পারে না।
‘আমাদের শরণার্থীরা যখন ভারতে আশ্রয় নিল তখন তো তারা দেখেনি কে হিন্দু কে মুসলমান। সবার পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করেছে। এটা আমরা ভুলবো কি করে, এই যে অবদানটা সেটাও আমাদের মনে আছে।
সব ধর্ম শান্তির শিক্ষা দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সময় বিশ্বাস করি যার যার ধর্ম সে পালন করবে। ইসলাম ধর্মও সে শিক্ষা দেয়। আমরা মনে করি সব ধর্মেই একথা বলা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা ধর্মই শান্তির বাণী শুনিয়েছে। শ্রী কৃষ্ণ যে জন্ম নিয়েছিলেন তার মতোই তো মানব কল্যাণে। সেখানে তো বলা নেই যে শুধু হিন্দুদের কল্যাণ কর। আর কারও কল্যাণ করো না সে কথা তো বলেনি। মানবকল্যাণ, মানুষের জন্য কাজ করা।
শেখ হাসিনা বলেন, দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন, সেটা কি ভাগ করে বলা হয়েছে। শুধু হিন্দু শিষ্ট হলে তাকে দেখবে তা তো বলেনি। যারা শিষ্ট তাদের পালন করা যারা দুষ্টু তাদের দমন। যখনই কোনো ধর্মীয় শিক্ষাগুরু এসেছেন শান্তির বাণী শুনিয়েছেন।
‘আপনি যদি সব ধর্মের বাণীগুলো ভালোভাবে মনযোগ দিয়ে দেখেন সব ধর্মই শান্তির কথা বলেছে, মানব কল্যাণের কথা বলেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় এটাই লক্ষ্য থাকবে আমাদের প্রত্যেকটা ধর্ম আজ যার যার। আমাদের ঈদ বলেন, আপনাদের পূজা বলেন বা বৌদ্ধ পূর্ণিমা বলেন, অথবা বড় দিন। এখন কিন্তু বাংলাদেশে, পৃথিবীতে বাংলাদেশেই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি এই যে ধর্মীয় একটা পরিবেশ এত সুন্দর আন্তরিক পরিবেশে প্রত্যেকটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান আমরা মিলে মিশে আমরা উদযাপন করি। এখানে কিন্তু আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে না, সবাই মিলেই সবার অনুষ্ঠানে যাই।
পহেলা বৈশাখ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের বাংলা নববর্ষ। এই নববর্ষটা সবাই মিলেই উৎসব আয়োজন করি, উৎসব পালন করি।
পহেলা বৈশাখকে যারা হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি বলে তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু কিছু … লোক থাকে, অনেকে জ্ঞান পাপী আছে। কিছু কিছু বলে যে পহেলা বৈশাখ এটা নাকি হিন্দুয়ানি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্রাট আকবর এই পহেলা বৈশাখ, হালখাতা খোলা এবং উৎসবটা আয়োজন করেছিল। তাহলে এখন সেটাকে অন্য ধর্মের বলে ঠেলে দিলে হবে কি করে? আমরা এখন সেখানে উৎসব ভাতা দিতে শুরু করেছি।
পহেলা বৈশাখ পালনে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় বাধা দিয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৩ সালে পহেলা বৈশাখে যখন আমরা নতুন শতাব্দীতে পর্দাপর্ণ করি ১৪০০ সাল বাংলা। এই ১৪০০ সাল উদযাপন করার জন্য কমিটি করি তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। আমাদের বাধা দিয়েছিল যে এটা করা যাবে না।
‘সেটা করতে দেবে না। তাদের মাথায় কি থাকে সেটাতো জানেনই আপনারা। আমরা জোর করে সেবার উদযাপন করেছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে এসে এখন আমরা উৎসব ভাতা দিয়েছি। সবাই মিলে এ উৎসব পালন করছি।
বিএনপি-জামায়াত আমলে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জামায়াতের চরিত্রটাই এরকম। আপনারা জানেন তারা কীভাবে অত্যাচার করে। বিভিন্ন ঘটনার পর… বিভিন্ন মন্দির ভাঙা হয়েছে, কীভাবে অত্যাচার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চরম অত্যাচার নির্যাতন হয়েছে। তখন আমরা ছুটে গিয়েছি সবার কাছে। এমনকী ঢাকেশ্বরী মন্দির পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছিল। আপনাদের মনে আছে। আমরা সেটা আবার নতুনভাবে করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কাজই ছিল এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালানো। আমরা তো আক্রমণের শিকার মুসলমানরা তো আছি। এভাবে সব সময় তারা একটা বিভেদ সৃষ্টি করা এই প্রচেষ্টা তারা নিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনও এতে বিশ্বাস করে না।