ভারতের আসামে ঘোষিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনকে (এনআরসি) দেশটির ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করছি না এবং করতে চাই না। তাঁরা যদি আমাদের ব্যাপারে কিছু জানতে চায়, তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়াটা আমরা জানাব।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুরে কারা কমপ্লেক্সে কারারক্ষীদের ৫৬তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শনিবার ভারতের আসাম রাজ্যে এনআরসি প্রকাশ করা হয়। এই তালিকায় রাজ্যের ১৯ লাখের বেশি মানুষ নাগরিকত্ব থেকে বাদ পড়েছেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, ১৯৭১ সালের পরে আমাদের বাংলাদেশ থেকে কোনো লোক ভারতে যাননি। যাঁরা গিয়েছেন, তাঁরা আগেই গিয়েছেন। ওই দেশ থেকে লোক যেমন এ দেশে এসেছেন, তেমনি আমাদের দেশ থেকেও গিয়েছেন। কাজই এনিয়ে আমাদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গরিব–অসহায় বন্দীদের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অ্যাক্ট-২০০০ কার্যকরী করে বিনা খরচে আইনজীবী নিয়োগ দিচ্ছে। অন্যদিকে, এনজিওদের মাধ্যমে কারাগারে ‘প্যারা-লিগ্যাল অ্যাডভাইজরি সার্ভিস’ চালু করে আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মোতাবেক পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে প্রিজন লিংক ‘স্বজন’ নামে টেলিফোন বুথ স্থাপন করা হয়েছে। অন্য কারাগারগুলোতেও তা বাস্তবায়ন করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্দীদের শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের আয়ের অর্ধেক বন্দীকে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে।
মন্ত্রী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে আরও বলেন, কারাগার ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কারারক্ষীদের ৫৬তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সগুলো সময়োপযোগী সিলেবাসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদানের পাশাপাশি চারিত্রিক ও নৈতিক উন্নতির বিষয়ে প্রেষণা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া আধুনিক অস্ত্র ও নিরাপত্তা যন্ত্র পরিচালনা, অস্ত্রবিহীন প্রতিরক্ষা কৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি, কম্পিউটার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জাতির পিতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন, অপরাধতত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রসচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) মো. শহিদুজ্জামান, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা, গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, কারা উপমহাপরিদর্শক বজলুর রশীদ, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন, কারা উপমহাপরিদর্শক বজলুর রশীদ, কারা উপমহাপরিদর্শক আলতাব হোসেন, গাজীপুরর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১–এর সিনিয়র জেলা সুপার সুব্রত কুমার বালা, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার শাহজাহান আহমেদসহ কারা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা-১–এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, প্রশিক্ষণটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শুরু হয়ে। এতে ৩১৯ জন নবীন কারারক্ষী অংশ নেন। সেখানে তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে পরবর্তী তিন মাস গাজীপুরের কাশিমপুর কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণে নবীন কারারক্ষীদের মধ্যে সব বিষয়ে প্রথম হন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের মারুফ হোসেন, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের বিপ্লব হোসেন এবং ‘বেস্ট ফায়ারার’ নির্বাচিত হন মেহেরপুর জেলা কারাগারের সাজ্জাদ হোসেন।