জ্বালানি সাশ্রয় ও অর্থায়ন প্রকল্পে জাপানি কোম্পানি ‘মিতসুবিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’কে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। জাপানের আর্থিক সহায়তায় দেশের শিল্প কারখানায় জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। শনিবার (৩১ আগস্ট) টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে একট চুক্তি সই হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, জ্বালানি সাশ্রয় ও জ্বালানি দক্ষতার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি, কারিগরি সক্ষমতা বাড়ানো, প্রণোদনা দেওয়া ও জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই সাশ্রয় বিষয়ে পরামর্শ দেবে জাপানের প্রতিষ্ঠান মিতসুবিসি।
চুক্তিতে স্রেডার অধীন এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন ফাইনেন্সিং প্রজেক্ট-এর প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল হক ও মিতসুবিসির পক্ষে ড. কোতারো নাগাসাওয়া স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সই করেন।
এই প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘জ্বালানি সাশ্রয়ে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। পরিবেশদূষণ রোধ করার পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয়ী হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ধনী দেশ জ্বালানি সাশ্রয়ী। কারণ তারা জ্বালানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। আমাদেরও সেই পথে হাঁটতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে এখনই। এখন সবচেয়ে ভালো সময়।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্রেডার উচিত জ্বালানি সাশ্রয়ে জনসচেনতা বাড়ানোর জন্য ব্যাপকভাবে ক্যাম্পেইন করা।’ তিনি বলেন, ‘নতুন কিছুর প্রচলন করতে গেলে প্রণোদনা দেওয়া উচিত। আমাদেরও তাই করতে হবে। শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জ্বালানি সাশ্রয়ী করে গড়ে তুলতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।’
বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রাশের ব্যবহার বেশি হলে দীর্ঘমেয়াদে তা লাভজনক। এজন্য স্রেডোর উচিত হবে অর্থ বিভাগ ও বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলোকে এ সম্পর্কে জানানো। যেন তারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শিল্প কারখানাটি জ্বালানি সাশ্রয়ী কিনা, তা দেখে। জ্বালানি সাশ্রয় যন্ত্রাংশ ব্যবহার করলে একই জ্বালানি খরচে বেশি পণ্য উৎপাদন সম্ভব। এই বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বেশি বেশি প্রচার চালাতে হবে।’
স্রেডার সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, সিমেন্ট কারখানায় তারা জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রাংশ স্থাপনের ঋণ দিয়েছে। এর ফলে ওই সব কারখানায় সিমেন্টের ব্যাগ প্রতি উৎপাদন ব্যয় ৩৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। যেসব তৈরি পোশাক শিল্প তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রাংশ সংযোজন করেছে, তাদের ১৫ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যুতের সাশ্রয় হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সীমিত জ্বালানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জ্বালানির উৎপাদন, সরবরাহ ও ব্যবহারিক পর্যায়ে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ ভাগ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে ২০১৩ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯৫ মিলিয়ন টন জ্বালানি তেলের সমান জ্বালানি সাশ্রয় হবে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। জ্বালানি সাশ্রয় ও জ্বালানি দক্ষতার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি, কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রণোদনা দেওয়া ও জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ঘোষিত জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে এরইমধ্যে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( স্রেডা)-এর প্রস্তুত করা ‘এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন মাস্টার প্ল্যান আপ টু ২০৩০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই প্ল্যান অনুযায়ী দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির ৪৮ ভাগ শিল্প খাতে এবং ৩০ ভাগ আবাসিক খাতে ব্যবহৃত হয়। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প খাতে ৩১ ভাগ এবং ৩১ ভাগ আবাসিক খাতে ৩৫ দশমিক ৯ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। বাংলাদেশে শিল্পখাতে জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিতকরণ ও শিল্প কারখানায় জ্বালানি দক্ষ যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্রেডা শিল্প কারখানা উদ্যোক্তা ও গ্রাহক পর্যায়ে ৪ ভাগ সুদে ঋণ সুবিধা দিতে এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন ফাইনেন্সিং প্রজেক্ট পরিচালনা করে আসছে। স্রেডা কারিগরি অনুমোদন পাওয়া আগ্রহী শিল্প কলকারখানাগুলো ইডকল ও বিআইএফএফএল-এর মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এই কার্যক্রমের আওতায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ১ হাজার ২০০ জাপানি ইয়েন ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ হাজার জাপানি ইয়েন ঋণ দেবে। যার সুদের পরিমাণ হবে মাত্র ৪ ভাগ।
অনুষ্ঠান শেষে জ্বালানি নিরীক্ষক (এনার্জি অডিটর) প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, স্রেডার চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, স্রেডার সদস্য সিদ্দিক জুবায়ের প্রমুখ।