‘দেখলেন তো? প্র্যাকটিসের চেহারাই পাল্টে গেছে আমাদের। আগের সেই রিল্যাক্সড প্র্যাকটিস আর নেই। অল্প সময়ের ব্যাটিং আর একটু আধটু বোলিং অনুশীলনের দিন শেষ। নতুন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো দায়িত্ব নিয়ে সপ্তাহখানেকের ভেতরেই পাল্টে ফেলেছেন সব। এখন প্রচুর সময় নিয়ে ব্যাটিং-বোলিং প্র্যাকটিস করতে হচ্ছে। নেটে একটানা ৪০ মিনিট কিংবা তারও বেশি সময় ধরে ব্যাটিং অনুশীলন করতে হচ্ছে। বোলারদের বিশেষ করে পেসারদেরও বোলিং করতে হচ্ছে প্রায় এক নাগাড়ে ১০ ওভার।’

ওপরের কথাগুলো প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর। বুধবার দুপুরে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের তিন তলায় প্রধান নির্বাচকের কক্ষে আলাপে এক নিঃশ্বাসে ওপরের কথাগুলো বলে গেলেন নান্নু।

২৫-২৬ আগস্ট, পর পর দুদিন টানা প্র্যাকটিস হয়েছে। ২৭ আগস্ট মঙ্গলবার ছিল বিরতি। আজ বুধবার সকাল দশটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত প্র্যাকটিস হয়ে কাল আবার বিশ্রাম। তারপর শুক্র ও শনিবার দু দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ। তার মানে ৭২ ঘণ্টায় দুদিন বিশ্রাম।

কি এমন প্র্যাকটিস হলো যে তিন দিনে দুদিন বিশ্রাম নিতে হবে? তবে কি টাইগারদের একটু বেশি আরাম দেয়া হচ্ছে? নাকি প্রচন্ড গরমে যাতে ক্লান্তির পাশাপাশি অবসাদ গ্রাস করতে না পারে, তাই বিশ্রামের সময়টা বেশি দেয়া হয়েছে? একটু বেশি আরাম দেয়া হচ্ছে না?

এসব প্রশ্নের জবাবেই ওপরের কথাগুলো বলেছেন নান্নু। আসলে বাইরে থেকে সেটা মনে হবারই কথা। কিন্তু সামনাসামনি দেখলে মোটেই তা মনে হবে না। আসলে টিম বাংলাদেশের প্র্যাকটিসের ধরনটাই গেছে পাল্টে।

টিম বাংলাদেশের প্র্যাকটিসে আগের সেই চিরায়ত ধারা নেই। এসেছে নতুনত্ব। আগে বাংলাদেশের প্র্যাকটিস মানেই ছিল ‘সব্জি খিচুড়ি।’ মানে সব কিছুর সমাহার।

সময়কাল ছিল সর্বোচ্চ তিন ঘন্টা। এর মধ্যেই ফিজিক্যাল ট্রেনিং, ফুটবল খেলা। নেটে ব্যাটিং-বোলিং আর তারপর ফিল্ডিং ও ক্যাচিং প্র্যাকটিস প্রায় সবগুলো একসঙ্গে। তাতে করে কোন বিভাগেই গড়পড়তা ২০-২৫ মিনিটের বেশি সময় পাওয়া যেতো না।

যেমন-নেটে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট ব্যাটিংয়ের সুযোগ মিলতো। বোলাররা নেটে বড়জোর ৫ ওভার কিংবা তারও কম বোলিং করতেন। তাতে করে ব্যাটসম্যানদের লম্বা সময় ক্রিজে কাটানোর মানসিকতাই ছিল কম। আর বোলাররা বিশেষ করে পেসাররা ৪ থেকে ৫ ওভারের বেশি টানা বোলিং করলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতেন।

কিন্তু নতুন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো এক সপ্তাহের মধ্যেই সব পাল্টে দিয়েছেন। এখন আর ঐ একটু একটু করে অল্প স্বল্প ব্যাটিং, বোলিং-ফিল্ডিং প্র্যাকটিস হয় না। রুটিন করে অনেক বেশি সময় নিয়ে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন করতে হচ্ছে।

১৯ আগস্ট বিকেলে রাজধানীতে পা রেখে রাতটুকু পার করে ২০ আগস্ট সকালে শেরে বাংলায় ছেলেদের এক ঘণ্টা কন্ডিশনিং ক্যাম্প দেখে কনফারেন্স হলে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলে আবার সোজা অনুশীলনে গিয়েছিলেন। তার দুদিন পর থেকে শুরু হয়েছে ক্রিকেট প্র্যাকটিস, স্কিল ট্রেনিং।

সেখানেই ডোমিঙ্গো এনেছেন নতুন ধারা। পরিষ্কার বলে দিয়েছেন- যেদিন, যখন যেটা অনুশীলন হবে সেদিন তখন সেটা খুব বেশি করে আর ভালমত হবে। একটু আধটু বলে কিছু নেই। যা কিছুই হবে সেটা সময় আর যত্ন নিয়ে করতে হবে। তাতে সবারই কল্যাণ।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এখন ব্যাটিং হচ্ছে অনেক বেশি সময় ধরে। ঐ ১৫/২০ মিনিটের নেট সেশন বাদ। সবই অনেক বেশি সময় ধরে হচ্ছে। নেটে ব্যাটিংয়ের রুটিন প্র্যাকটিসটাই হচ্ছে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার। কেউ কেউ এক ঘন্টার বেশি সময় ব্যাট করছেন। আর ব্যক্তিগতভাবে যাদের ইচ্ছে তারা দুই থেকে তিন ঘণ্টাও নিজেদের ব্যাটিংটা ঝালিয়ে নিচ্ছেন।

মাঝখানে সাকিব ও মুশফিক পর পর দুই দিন গড়পড়তা আড়াই ঘণ্টার মত ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেছেন। আজও সাকিব শেরে বাংলার সেন্টার উইকেটের নেটে অন্তত দেড় ঘণ্টা টানা ব্যাটিং অনুশীলন করলেন। একইভাবে মুশফিকও টিমের রুটিন প্র্যাকটিসের পর আরও অন্তত এক থেকে সোয়া ঘণ্টা বাড়তি সময় নেটে কাটালেন।

বোলারদেরও আগের মত অল্প কিছু সময়ের বোলিং করে প্র্যাকটিস সেশন কাটানোর দিন শেষ। সবাইকে লম্বা স্পেলে এবং যতটা সম্ভব এক জায়গায় বোলিং করতে বলা হয়েছে। এতে করে ব্যাটসম্যানদের লম্বা সময় উইকেটে থাকার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। তড়িঘড়ি করে শটস খেলার বদলে ধৈর্য্য, মনোযোগ আর মনোসংযোগ নিয়ে বলের মেধা গুণ বিচার করে খেলার অভ্যাসটাও তৈরি হচ্ছে। আর বোলারদের লম্বা স্পেলে বল করার শক্তি-সামর্থ্য গড়ে উঠছে। যার অভাব ছিল প্রবল।

দেখা যাক, এই বেশি সময়ের স্কিল ট্রেনিং কতটা কার্যকর হয়!

সংবাদ সূত্র: জাগো নিউজ

Leave a Response