দুই দফা চাপ দিয়েও নিরীক্ষা আপত্তির ‘পাওনা’ টাকা আদায় করতে না পেরে দেশের দুই শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির লাইসেন্স বাতিলের মত চূড়ান্ত পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছে সরকার।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ওই দুই অপারেটরের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে ইতোমধ্যে নোটিস পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে।

“আমরা তো প্রথমে ক্যাপ (ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়া) করেছি, পরে তাদের এনওসি (সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র) দেওয়া বন্ধ করেছি। এখন তাদের নোটিস দেওয়া, আরও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।”

বিটিআরসির দাবি, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।

তাগাদা দেওয়ার পরও ওই টাকা পরিশোধ না করার যুক্তি দেখিয়ে গত ৪ জুলাই গ্রামীণফোনের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি ৩০ শতাংশ এবং রবির ১৫ শতাংশ সীমিত করতে আইআইজিগুলোকে নির্দেশ দেয় বিটিআরসি।

কিন্তু তাতে গ্রাহকের সমস্যা হওয়ায় ১৩ দিনের মাথায় ওই নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয় বিটিআরসি। এরপর ২২ জুলাই গ্রামীণফোন ও রবিকে বিভিন্ন প্রকার সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, “আমি দীর্ঘদিন যাবত চেষ্টা করছি। না এরা এক টাকা দিয়েছে, না কানে তুলছে যে সরকারের কাছে তাদের দেনা আছে।”

এই পরিস্থিতিতে লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে নোটিস দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “গা যেহেতু করছে না, আমরা তো জাতীয় অর্থ পানিতে ফেলে রাখতে পারি না। এই ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে পারি না। আমাদের দিক থেকে বিটিআরসিকে বলা হয়েছে তোমরা চূড়ান্ত নোটিস দাও।”

দেশে গ্রাহকের হাতে থাকা ১৬ কোটি ৮২ হাজার নিবন্ধিত মোবাইল সিমের মধ্যে ৭ কোটি ৪৭ লাখ সিম গ্রামীণফোনের। আর রবির ৪ কোটি ৭৬ লাখ সিম রয়েছে গ্রাহকের হাতে। এই হিসাবে মোট গ্রাহকের ৪৬.৪৯ শতাংশ গ্রামীণফোন এবং ২৯.৬৫ শতাংশ রবির সেবা নিয়ে থাকেন।

দেশের ৯ কোটি ৪৪ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ৮ কোটি ৮৬ লাখই মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যা মোট গ্রাহকের ৯৩.৮৭ শতাশংশ।

বিটিআরসি ‘এনওসি’ দেওয়া বন্ধ রাখায় গ্রামীণফোন ও রবি বর্তমান সেবা চালিয়ে নিতে কোনো সমস্যায় পড়ছে না। তবে তারা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বা বিটিএস স্থাপন করতে পারছে না, যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমতি পাবে না, নতুন কোনো প্যাকেজ তারা বাজারে ছাড়তে পারছে না, চলতি প্যাকেজে কোনো পরিবর্তনও আনতে পারছে না।

টাকা আদায়ের ‘কৌশল’ হিসেবে বিটিআরসির এ ধরনের পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে দুই অপারেটরই বলে আসছে, ব্যবসায়িক বিরোধ মেটাতে গ্রাহকের স্বার্থ, জাতীয় অর্থনীতি এমনকি দেশের ভাবমূর্তিকেও জিম্মি করা হচ্ছে।

দুই কোম্পানিই বিটিআরসির দাবি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের আইনে এ ধরনের ক্ষেত্রে সালিশের কোনো সুযোগ নেই। 

গ্রামীণ ফোন ও রবিকে কবে ওই নোটিস দেওযা হবে জানতে চাইলে বিটিআরসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, তাদের চেয়ারম্যান জহুরুল হক এখন ভুটান সফরে আছেন। তিনি ফিরলে আগামী সপ্তাহেই নোটিস পাঠানো হতে পারে।

তবে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি এখনও না পাওয়ায় সম্ভাব্য ওই নোটিসের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি দুই অপারেটরের কেউ।  

বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. জাকির হোসেন খাঁন বলেন, “সরকারি পাওনা পরিশোধে অপারেটরদের সহযোগিতা সব সময় কাম্য। কমিশনের যে কোনো ধরনের উদ্যোগ ও পদক্ষেপ আইন অনুযায়ী গ্রহণ করা হয়।

“আমরা আশাবাদী, যে পাওনা আছে, তা পরিশোধ করে অপারেটররা একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আসার চেষ্টা করবে। তা না হলে লাইসেন্সের গাইডলাইন অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

Leave a Response