ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ শিল্পোন্নত সাতটি দেশের জোট জি-৭ সম্মেলনে হঠাৎ হাজির হয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। গতকাল রোববার ফ্রান্সের সাগরঘেঁষা শহর বিয়ারিটজে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অপ্রত্যাশিতভাবে উপস্থিত হন তিনি। সেখানে তিনি এক পার্শ্ববৈঠকে মিলিত হন। ওই সম্মেলনে উপস্থিত রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারা।

আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনির্ধারিত ও সংক্ষিপ্ত এই সফর চমকে দিয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে। ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড সীমিত করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের করা চুক্তি থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র নাম প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। এর মধ্যে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন, উপসাগরীয় এলাকায় তেল ট্যাংকারে হামলা, ড্রোন ভূপাতিত করাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্কে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

টুইটারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফ বৈঠকের সময়ের এক ছবি প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ‘গঠনমূলক’ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সামনের পথ কঠিন। এর মধ্যেও চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’ তিনি জার্মান ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও এক যৌথ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এর আগে মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ গত শুক্রবার সম্মেলনের দিন সন্ধ্যায় প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী ফ্রান্সসহ অন্য পাঁচটি দেশ এখনো চুক্তিটি বহাল রাখার পক্ষে। তবে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রতিক্রিয়ায় ইরান চুক্তি লঙ্ঘন করে পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে এবং চুক্তি বাঁচাতে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বেশ সক্রিয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উপসাগরীয় এলাকায় তেল ট্যাংকার হামলা ও ট্যাংকার জব্দ করা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ব্রিটিশ ট্যাংকার জব্দ করা নিয়ে ইরানের ওপর ক্ষুব্ধ রয়েছে যুক্তরাজ্য।

ইরানের যেসব নেতার ওপর অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তাঁদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফও একজন। মার্কিন কর্তৃপক্ষের ভাষায়, ইরানের নেতাদের ‘বেপরোয়া এজেন্ডা’ বাস্তবায়ন করেন জারিফ।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এভাবে হঠাৎ হাজির হওয়াকে ঘিরে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের জানায়, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সম্মতিতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এ ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন।

এর আগে গতকাল সকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনে ফ্রান্সের মধ্যস্থতার চেষ্টাকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘যা করার তা আমরা নিজেরাই করব। কিন্তু আপনারা জানেন, লোকজনকে কথা বলা থেকে বিরত রাখা যায় না। যারা কথা বলতে চায়, বলুক।’

সপ্তাহজুড়ে চলমান জি-৭–এর ৪৫তম সম্মেলনে অংশ নিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্যসূচির মধ্যে গুরুত্ব পাচ্ছে পারমাণবিক চুক্তি ও ব্রেক্সিট ইস্যু।

Leave a Response