আরেকটি প্রজেক্টের মতো করে শুরু করা কাজ আজকের দিনে বিশ্বজুড়ে মহামারির পরিচিত চেহারা হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) মেডিক্যাল ইলাস্ট্রেটর অ্যালিসা একরার্ট ও ড্যান হিজিনস যখন নোবেল করোনাভাইরাসের ইলাস্ট্রেশনের কাজ শুরু করেন, তখন তারা ভাবতেও পারেননি সারা বিশ্বের মানুষ মহামারির সময়ে প্রতিদিন এই ছবিটি দেখবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর কাছে নিজেদের সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন তারা।
জানুয়ারির শেষ দিকে সিডিসি’র এমারজেন্সি অপারেশন্সের কার্যক্রম শুরুর পর একরার্ট ও হিজিনসকে বলা হয়েছিল যে, ভাইরাসটির একটি ছবি প্রকাশ করতে হবে। তারা তখনই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় ভাইরাসটির গঠন নিয়ে গবেষণা আর সিডিসি’র সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা, বলেন একরার্ট।
তথ্য সংগ্রহের পর ইলাস্ট্রেটররা ওয়েবসাইটে প্রোটিন ডাটা ব্যাংক খুঁজে দেখা শুরু করেন। এই ডাটা ব্যাংকে প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিডের মতো জৈব অণুর বড় ধরনের ত্রিমাত্রিক কাঠামোর তথ্য সংগৃহীত রয়েছে।
হিজিনস বলেন, ‘প্রোটিন ডাটা ব্যাংক ব্যবহার করে গবেষণার মাধ্যমে আমরা ভাইরাসটির গঠন ত্রিমাত্রিক পরিবেশে স্থাপন করার মতো প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশ করতে সক্ষম হই। আমরা দৃশ্যায়ন সফটওয়ারে এসব তথ্য ডাউনলোড করি। প্রয়োজনীয় অংশগুলো নেই, তাদের জোড়া লাগাই তারপর সেগুলো ত্রিমাত্রিক সফটওয়্যারে নেই।’
ত্রিমাত্রিক সফটওয়্যারে তারা ভিন্ন ভিন্ন আলো, উপাদান ও রঙ-এ এগুলো পরীক্ষা করেন। এসব ইফেক্ট বেছে নেওয়ার পর তারা ইলাস্ট্রেশনে চূড়ান্ত সম্পাদনা করেন। এরপরই সিডিসি’র অনুমোদনের পর ইলাস্ট্রেশনটি প্রকাশ করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ।
রঙ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একরার্ট ও হিজিনসকে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়েছিল তা হচ্ছে মানুষ যেন পরিস্থিতির তীব্রতা সম্পর্কে বুঝতে পারে। একরার্ট বলেন, ‘আমরা চাইনি এটা খুব বেশি খেলো হয়ে যাক, কিংবা খুব বেশি ভয়ের উদ্রেককারী হয়ে যাক। আমরা কাঠামোটিকে বাস্তববাদী গঠনও দিতে চেয়েছিলাম।’
ছবিটিকে বাস্তবসম্মত করার পাশাপাশি তাদের মাথায় রাখতে হয়েছে করোনাভাইরাস কীভাবে জনগোষ্ঠীকে আক্রান্ত করছে তা যেন মানুষ বুঝতে পারে। অল্প করে বললে বলতে হয়, তাদের এতে জীবন দিতে হয়েছে। তারা উভয়েই বলেন, ‘জীবন্ত গঠন দিতে গিয়ে মাথায় রাখতে হয়েছে যেন মনে হয় এটা ধরা যাবে। আমরা ভাইরাসটির চেহারা বানাতে চেয়েছি।’
সিডিসি’র গ্রাফিক সার্ভিস টিমে আট জন ইলাস্ট্রেটর কাজ করেন। এর মধ্যে ছয় জন মেডিক্যাল ও দুই জন নন-মেডিক্যাল। এই টিমের অনেক কাজের মধ্যে একটি করোনাভাইরাস ইলাস্ট্রেশন। ইবোলা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, মাম্পস, নোরোভাইরাস, হলুদ জ্বর, রোটাভাইরাস ও হান্টাভাইরাসের ইলাস্ট্রেশন বানিয়েছে এই দলটি।
মেডিক্যাল ইলাস্ট্রেটর হওয়া সহজ নয়। একজন মেডিক্যাল ইলাস্ট্রেটর হতে হলে তার বিজ্ঞান, শারীরিক গঠন এবং জটিল জৈবিক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্যকে মানুষের কাছে সহজবোধ্য করে তুলতে পারার মতো শিল্প জ্ঞান থাকতে হয়।