ইডেনের মূল ফটক গোলাপিতে জ্বলজ্বল করছে১৮৭৬ সালে ব্রিটেনের প্রিন্স অ্যালবার্ট ভারত ঘুরতে আসেন। তাকে আতিথেয়তা দিতে অভিনব কায়দা বেছে নেন জয়পুরের ক্ষমতাধর মহারাজা রাম সিং। ‘প্রিন্স অ্যালবার্ট মিউজিয়াম’ নামে বিশাল একটি কনসার্ট হল তৈরির পাশাপাশি পুরো শহরকে সাজান আতিথেয়তার প্রতীক গোলাপি রঙয়ে। ওই ঐতিহ্য ধরে রেখে জয়পুর এখন ‘পিঙ্ক সিটি’ হিসেবে সুপরিচিত সারা বিশ্বে। এবার প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট উপলক্ষে ভারতের আরেক প্রান্ত সেজেছে গোলাপি রঙয়ে। কলকাতাকে এখন আরেক ‘পিঙ্ক সিটি’ বললে ভুল হবে না মোটেও।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা এখন কাঁপছে গোলাপি জ্বরে। নৈশালোকে নেশা ধরানো টেস্ট ম্যাচ। নন্দনকাননে হওয়া এই টেস্ট ম্যাচে বিরাট কোহলি ও মুমিনুল হক একই কাতারে! আগামীকাল শুক্রবার ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেন গার্ডেনসে শুরু হবে রোমাঞ্চ জাগানিয়া এই টেস্ট, যার শিহরণ এরই মধ্যে স্পর্শ করেছে স্বাগতিক ও সফরকারী দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে। শুধু তাই নয়, ক্রিকেটারদের ছাড়িয়ে এই ম্যাচের উত্তেজনা গোটা শহরের আনাচে কানাচে। ভারতের প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট নিয়ে কলকাতা জুড়ে উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো।
শহরের আলোকসজ্জা নিয়ে আগের দিন কথা হয়েছিলো ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাসের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘সন্ধ্যা নামলেই দেখবেন কী করা হয়েছে! আসলে আমি মুখে বললে আপনার বিশ্বাস হবে না। আশপাশের এলাকা, শহীদ মিনার সব গোলাপি রঙয়ের আলোতে জ্বলবে।’ গতকাল সন্ধ্যা নামার পরই বোঝা গেলো একটুও বানিয়ে বলেননি দেবব্রত দাস। পুরো শহরই তো গোলাপি।
দিনের আলোয় সেটা বোঝা না গেলেও সন্ধ্যা নামতেই পুরো শহরটা যেন গোলাপের আভাতে জ্বলজ্বল করছিলো। বুধবার রাতে কলকাতা শহর চষে বেড়িয়ে এমন কোথাও দেখা গেলো না যে সেটা গোলাপি নয়। ইডেন গার্ডেনসের আশপাশের এলাকাজুড়ে দেখা যায় আতিথেয়তার বর্ণিল আলোকচ্ছটা। কলকাতার শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে গোলাপি রঙয়ের প্রাধান্য, টাঙানো হয়েছে বিলবোর্ড। রাতের আলোয় সবই গোলাপি রঙয়ের আলো ছড়াচ্ছে। মোড়ে মোড়ে ঝুলছে দুই দলের টেস্ট অধিনায়কের ছবি, আছে ইডেনের মূল ফটকেও। মাসকট ঘিরে আনা হয়েছে গোলাপির আভা।
গোলাপি বলের টেস্ট ঘিরে ইডেন গার্ডেনস সেজেছে আলাদাভাবে। বিসিসিআই ও সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় করা হয়েছে বিশেষ গ্রাফিতি। স্ট্রিট ক্রিকেটার থেকে ভারতের জাতীয় দলে উঠে আসার বিভিন্ন ধাপ তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। এই গ্রাফিতিগুলো ইডেনকে করে তুলেছে আরও চাকচিক্যময়।
তবে সবচেয়ে নজর কাড়বে টাটা’র ৪২ তলা ভবন। গোলাপি বলের দিবা-রাত্রির এই টেস্টের জন্যই এই ভবনকে সাজানো হয়েছে বিশেষভাবে। ‘ফোরটি টু বিল্ডিং’ নামে পরিচিত এই ভবনের ওপরের ১৩ তলার পুরোটাতেই জ্বলছে গোলাপি আলো।
ধর্মতলা, রবীন্দ্র সদন প্রাঙ্গন- কোথায় নেই গোলাপি রঙ! এমন কী হুগলি নদীতে চলন্ত বিশেষ একটি লঞ্চেও দেখা গেছে হোলাপির আভা। কলকাতায় দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচের সময় হাওড়া ব্রিজ থেকে বিদ্যাসাগর সেতু পর্যন্ত নদীতে ভাসবে এই লঞ্চটি। গাঙ্গুলীও টুইটারে গোলাপি বলের বিভিন্ন স্থাপনার ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন। সেখানে লিখেছেন, ‘এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না।’
এ তো গেলো গোলাপিময় শহরের কথা। মোড়ে মোড়ে আড্ডা চলছে এই টেস্ট নিয়ে। বাসে, ট্রামে, ট্রেনেও চলছে এনিয়ে আলোচনা। কেউবা টিকিট না পাওয়ার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দেড়টায় শুরু হবে উপমহাদেশের প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট। এই ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে আমন্ত্রিত অতিথিদের বেশ লম্বা তালিকা করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইডেনের ঐতিহাসিক ঘণ্টাটি বাজাবেন। তার সঙ্গে থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের সঙ্গে ভারতের সাবেক অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটাররাও থাকবেন। ২০০০ সালে অভিষেক টেস্টে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটাররাও থাকবেন উদ্বোধনী দিনে।
এই ঐতিহাসিক টেস্টের সমস্ত আয়োজন বিসিসিআই এবং সিএবি ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে করা হয়েছে। আয়োজনটা ঠিকমতো করতে পেরে দারুণ রোমাঞ্চিত গাঙ্গুলী, ‘আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত, দেখুন চারদিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। টেস্টে ম্যাচে এমনটা হচ্ছে ভাবা যায়?’ এবার দেখার পালা, নতুন ‘পিঙ্ক সিটি’র এই মুগ্ধতা শেষ পর্যন্ত ম্যাচেও ছড়ায় কিনা!