১২ ঘণ্টায় দেশের ৬ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সাভার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী ও কুমিল্লা জেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদকের পাঠানো খবর:

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস মহাসড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সিলেট, ৬ মার্চ। ছবি: আনিস মাহমুদ
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস মহাসড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সিলেট, ৬ মার্চ। ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস মহাসড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৪ জন। শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার কান্দিগাঁও এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান এই তথ্য জানান। হতাহত লোকজনের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে তাঁরা সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী ছিলেন। আহত লোকজনকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মাইক্রোবাসটি নারায়ণগঞ্জ থেকে সিলেট যাচ্ছিল। মাইক্রোবাসে আরোহী ছিলেন ১৩ জন। কান্দিগাঁও এলাকায় পৌঁছার পর চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে মাইক্রোবাসটি সড়কের পাশে একটি গাছের সঙ্গে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা খায়।

শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরশাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জে কাতারপ্রবাসী ইমন (২৪) মেয়ে দেখতে যাচ্ছিলেন। শেরপুর হাইওয়ে থানায় সাতজন পুরুষ ও একজন নারীর লাশ রয়েছে। আরেকজনের লাশ রয়েছে হাসপাতালে। এ ঘটনায় এক শিশুসহ আহত হয়েছে চারজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বিজয়নগর উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে আগুন ধরে ৬ জন দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। মাইক্রোবাসের ৪ জন আরোহী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলা রামপুরা বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা বিশ্বরোড মোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
হতাহত ব্যক্তিরা সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী ছিলেন বলে জানা গেছে।
নিহত ছয়জনের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁর নাম মো. শাহীন। তিনি মাইক্রোবাসের চালক ছিলেন। বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। আহত লোকজনকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, লিমন পরিবহন নামের যাত্রীবাহী বাসটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর নারায়ণগঞ্জ থেকে সিলেটের দিকে যাচ্ছিল যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটি। বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের পর মাইক্রোবাসে আগুন ধরে যায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা বিশ্বরোড মোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম বলেন, বাসটি আটক করা হয়েছে। বাসচালক পলাতক। লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। আহত লোকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।


ময়মনসিংহ: ভালুকা উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় পিকআপের চালকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুজন আহত হন। আজ ভোরে উপজেলার মেহরাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনা গ্রামের পিকআপ ভ্যানের চালক রাজন রবিদাস (২২) ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার তালাশ কোর্ট এলাকার আবদুস সালামের ছেলে মো. আজিম (২৩)।
ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার মেহরাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে একটি বড় পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা খায় মাছভর্তি আরেকটি ছোট পিকআপ। এতে ছোট পিকআপের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে রাজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ সময় আরও তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক আজিম নামের আরেক জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তিথি জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। আরেক জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল।
ভালুকা হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মাহমুদ আদনান বলেন, মাছভর্তি ছোট পিকআপের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অপর একটি বড় পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা লাগালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পিকআপ দুটি জব্দ করা হয়েছে। নিহত দুজনের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

সাভার: ঢাকার সাভারে গতকাল বাস ও ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-আরিচা ও আবদুল্লাপুর-বাইপাইল সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন রাজধানীর শেওরাপাড়ার কাজী নাজমুল হক (৪১) ও নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের কনস্টেবল আকাশ আহমেদ (২২)।
আশুলিয়া থানার পুলিশ জানায়, গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে মোটরসাইকেলে ঢাকার বাসায় যাওয়ার পথে নাজমুল হক বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের জামগড়া এলাকায় রিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বাসের নিচে গিয়ে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
অন্যদিকে সাভার হাইওয়ে থানার পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়ার শ্রীপুরের নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে নারায়ণগঞ্জে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন আকাশ। রাত একটার দিকে সাভারের উলাইল এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলসহ তাঁকে চাপা দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক ও সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ কনস্টেবলসহ দুজন নিহত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন।

ফেনীর সোনাগাজীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই যুবক। ছবি: সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই যুবক। ছবি: সংগৃহীত
ফেনী: সাতবাড়িয়া এলাকায় সোনাগাজী-ফেনী সড়কে মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় নির্মানাধীন সেতুর নিচে পড়ে নিহত হয়েছেন আজিজুল হক (২৮) ও জিয়া উদ্দিন বাবলু (২২)।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আজিজুল হকের বাড়ী মিরসরাইয়ের ধূম ইউনিয়নের নাহেরপুর এলাকায় এবং জিয়া উদ্দিন জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ইমামপুর এলাকার বাসিন্দা। সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমেদ সড়ক দুর্ঘটনায় দুই যুবককে মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেন।
পুলিশ ও স্থানীয়েরা জানায়, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই মারা যান আজিজুল। গুরুতর আহত অবস্থায় জিয়া উদ্দিনকে প্রথমে ফেনী ২৫০শয্যা জেনালের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুমিল্লা: দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী নামক স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকাগামী একটি বাসের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী এক ব্যক্তি (৩৫) ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি। আজশুক্রবার সকাল নয়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার আবদুল্লাহ আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নিহতের পরিচয় জানা যায়নি। লাশ দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ হেফাজতে রাখা আছে।

Leave a Response