যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া গ্রেপ্তার হয়েছিলেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি; পরদিন র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক তার কাণ্ডের কথা।
তার পরদিন থেকে পুঁজিবাজারে টানা পড়ছে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের শেয়ারের দর, যে কোম্পানি ওয়েস্টিন হোটেলের মালিকানায় রয়েছে।ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের শেয়ারের দাম গত নয় কার্যদিবসে ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে।
পাপিয়াকাণ্ডের আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে ইউনিকের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৫১ টাকা ২০ পয়সা; কমতে কমতে ৪ মার্চ বুধবার তা ৪৪ টাকা ৩৩ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।অথচ এই সময় ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে তালিকাভুক্ত আরেক হোটেল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ২২ শতাংশ।
অন্যদিকে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ওয়েস্টিনের মালিকানা প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরপতনের ক্ষেত্রে পাপিয়াকাণ্ডের বিষয়টি স্পষ্ট।
পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, ওয়েস্টিন হোটেলে ডেরা বানিয়ে সমাজের উঁচুতলার লোকদের জন্য ‘যৌনসেবার কারবার’ চালাতেন।
পাপিয়ার সঙ্গে ওয়েস্টিনের মালিকানায় থাকা ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর আলীর গল্প করার একটি ভিডিও এর মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় আসে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, হোটেল কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে দীর্ঘদিন ধরে পাপিয়ার অপকর্ম চালিয়ে আসা সম্ভবপর নয়।
ওয়েস্টিনকেন্দ্রিক পাপিয়ার অপকর্মে হোটেল কর্তৃপক্ষকে নিয়েও তদন্ত করার কথা জানায় র্যাব। পাপিয়ার বিষয়ে তথ্য চেয়ে দুদকও সম্প্রতি ওয়েস্টিন হোটেলকে চিঠি দেয়।
গ্রেপ্তারের পর র্যাব হেফাজতে শামীমা নূর পাপিয়া
দৃশ্যত এসবই ইউনিকের শেয়ারের উপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়েছে।একজন বিনিয়োগকারী বলেন, “ওয়েস্টিন হোটেলের সাথে জড়িয়ে গেছে পাপিয়ার নাম। সামনে ওয়েস্টিনের মুনাফায় এর প্রভাব আসতে পারে। সে কারণে কমে যাচ্ছে ইউনিক হোটেলের শেয়ারের দাম।”
২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট।২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে যথাক্রমে ৫৩ কোটি, ৫৯ কোটি ও ৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি।কোম্পানিটি ২০১৭ সালে দিয়েছে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, ২০১৮ সালে দিয়েছে ২২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ২০১৯ সালে দিয়েছে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ্।
ইউনিক হোটেল অ্যান্ড স্পার মোট শেয়ারের সংখ্যা ২৯ কোটি ৪৪ লাখ।এর মধ্যে ৫২ দশমিক ২৩ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৩১ দশমিক ৮০ শতাংশ। বিদেশিদের হাতে আছে ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
ইউনিকের বোর্ডে কারা
ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের উদ্যোক্তা পরিচালক নূর আলী কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। তিনি ইউনিক গ্রুপেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার স্ত্রী সেলিনা আলী ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান।
এক সময় ছাত্র ইউনিয়ন করা নূর আলী ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা-২ আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করে পরাজিত হন।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৩ জুন তেজগাঁও থানায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী (আজকের প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা একটি চাঁদাবাজি মামলার বাদী ছিলেন এই নূর আলী। পরে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে পুলিশ ওই মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নূর আলীর উপস্থিতিতেই এক নির্বাচনী সভায় শেখ হাসিনা বলেন, যারা মিথ্যা মামলা দিয়েছিল, তারাও ভুল বুঝে ক্ষমা চেয়েছে।
নূর আলীর সঙ্গে শামীমা নূর পাপিয়ার এই ভিডিও ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায়।
নূর আলীর আরেক কোম্পানি বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষ থেকে মনোনীত পরিচালক হিসেবে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পর্ষদে আছেন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং নূর ট্রেড হাউজের প্রতিষ্ঠাতা সিইও খালিদ নূর।
ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের মনোনীত পরিচালক হিসেবে আছেন ইউনিক গ্রুপের পরিচালক গাজী মো. সাখাওয়াত হোসেন এবং চার্টার্ড লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানির পরিচালক গোলাম সারওয়ার, যিনি নূর আলীর বিভিন্ন কোম্পানির অর্থ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দৈনিক আমাদের সময়ের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পদে আছেন।
এছাড়া সাবেক ব্যাংকার কে মাহমুদ সাত্তার (মিঠু সাত্তার) এবং মোহম্মদ ফোরকান উদ্দিন এবং অ্যাকাউন্টিং ফার্ম এম এম রহমান অ্যান্ড কোং এর অংশীদার মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পর্ষদে আছেন স্বাধীন পরিচালক হিসেবে।
ঢাকার গুলশান ২ নম্বরে ওয়েস্টিনের ওই ২৪ তলা হোটেল ভবনের কাজ শেষ হয় ২০০৬ সালে। আর ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওয়েস্টিন হোটেল বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ম্যারিয়ট বনভয়‘র চেইনভুক্ত।