পাপিয়াকাণ্ডে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক মাস আগে মামলা হয়েছে গুলশান থানায়, যা অনেকটা অন্তরালেই থেকে গেছে।
মধ্য জানুয়ারির ওই ঘটনার আসামি এখন হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ‘হুমকি-ধামকি’ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী তরুণী।
মামলার আসামি আমজাদ হোসাইন (৩৭) এফবিসিসিআইয়ের একজন পরিচালক। তিনি গুলশানের জনতা ট্র্যাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক; তার বাবা মোহাম্মদ আকরামহোসেন ১৯৯০-৯২ সময়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আমজাদ বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন, আর তদন্তাধীন বিষয়ে তিনি কথা বলতে চান না।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় মামলা হওয়ার পর পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুক্রবার মামলার নথি দেখার পর জানাযায় পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৫ ডিসেম্বর হোটেল ওয়েস্টিনে এক অনুষ্ঠানে আমজাদের সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে ফোনে ও বিভিন্ন অ্যাপে নিয়মিত বার্তা আদানপ্রদান শুরু হয়। এরপর ৩ জানুয়ারি বিকালে আমজাদ ওই তরুণীকে ওয়েস্টিনের ১৯১৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে ‘শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জোর’ করেন। তবে ওই তরুণীর আপত্তিতে সেদিন তা পারেননি।
ওই তরুণী বলছেন, ১৬ জানুয়ারি রাত ১০টা ২০ মিনিটে তার ধানমণ্ডির বাসার কাছে গিয়ে আমজাদ নিচে নামতে বলেন। তিনি প্রথমে রাজি না হলেও পরে আমজাদের পীড়াপীড়িতে নেমে আসেন। আমজাদ তখন তার গাড়িতে করে তাকে ওয়েস্টিন হোটেলে নিয়ে যান। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে নিয়ে আমজাদ তার বন্ধু নাহিয়ানের নামে ভাড়া করা ১০১০ নম্বর কক্ষে যান।
“কক্ষে নেওয়ার পর আমাকে এক পর্যায়ে কুপ্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখায়, রাত পৌনে ১টার দিকে আমাকে ধর্ষণ করে। আমি প্রতিবাদ করেও তার হাত থেকে রেহাই পাইনি।”
এজাহারে বলা হয়, সেই রাতের পর আমজাদ বিয়ের বিষয়ে ওই তরুণীকে ‘ঘোরাতে থাকেন’। এক পর্যায়ে বিয়ে করবেন না বলে জানিয়ে দেন এবং বিভিন্ন ধরনের ‘হুমকি’ দেন।
টেলিফোনে এফবিসিসিআই পরিচালক আমজাদের কাছে জানতে চাইলে চেয়েছিল তিনি ওই তরুণীকে চেনেন কি না। উত্তরে তিনি ‘হ্যাঁ’ বললেও কীভাবে চেনেন সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
১৬ জানুয়ারি রাতে ওয়েস্টিনে কী ঘটেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, শনিবার আবার ফোন দিলে তিনি ‘আলাপ’ করতে পারেন।
পরে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “উনার কাছে মনে হয়েছে, উনি ওইভাবে (মামলা) করেছেন। যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তো হবে। এখন পর্যন্ত এটাতে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।”
মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, “তদন্ত চলছে। মেডিকেল রিপোর্ট আমরা হাতে পাইনি।”
ওয়েস্টিন হোটেলের মার্কেটিং কমিউনিকেশনস বিভাগের সহকারী পরিচালক সাদমান সালাহউদ্দিনকে ফোন করে ধর্ষণের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এ নিয়ে গুলশান থানায় মামলা হয়েছে জানানোর পর তিনি বলেন, “আমি জানি না। আমি ছুটিতে… ছুটিতে…।”
হোটেলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কে কথা বলতে পারবেন তা জানতে চাইলে অফিসে ফোন করতে বলে লাইন কেটে দেন সাদমান।
পরে টেলিফোনে ওয়েস্টিনের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।”
এক পর্যায়ে সাদমান সালাহউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, “কথা বলার জন্য উই আর নট দ্য রাইট পার্সন।”