তবে লেখায় রকেট সিস্টেমের নাম উল্লেখ করেননি বাইডেন। তিনি বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইয়ে ও আলোচনার টেবিলে শক্তিশালী অবস্থান তৈরিতে ইউক্রেনকে সহযোগিতা করতেই এ অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার এই সামরিক সহায়তা প্যাকেজের ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ১১তম দফায় ইউক্রেনকে এ অস্ত্র সহায়তা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে হামলা শুরুর পর ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে। এ অস্ত্র সহায়তার মধ্যে রয়েছে শক্তশালী কামান হাউইৎজার, যা এপ্রিলে অনুমোদন দেওয়া হয়।
হিমার্স রকেট সিস্টেম কী
গাড়িতে স্থাপন করা উচ্চপ্রযুক্তির হালকা রকেট লঞ্চার হলো হিমার্স। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে ও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এটি সহজে মোতায়েন করা যায়। প্রতিটি ইউনিটে ছয়টি করে জিপিএস গাইডেড রকেট থাকে। প্রায় এক মিনিটের মধ্যে অল্প কয়েকজন মিলেই পুনরায় রকেট লোড করে ফেলতে পারে।
সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমান ইউক্রেনীয় বাহিনী যেসব রকেট সিস্টেম ব্যবহার করছে, তার চেয়ে এই রকেট সিস্টেম উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। এই রকেটগুলোর পাল্লা ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল)। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এম-৭৭৭ হাউইৎজারের চেয়ে হিমার্সের পাল্লা প্রায় দ্বিগুণ বেশি। ইউক্রেন যুদ্ধে মে মাসে এম-৭৭৭ হাউইৎজারের ব্যবহার শুরু হয়। তবে হিমার্সের কতটি ইউনিট সরবরাহ করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
হিমার্স কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে দূরপাল্লার কামান চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। সাধারণত পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এই সমতল অঞ্চলে হামলা প্রতিহত করা অন্য ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকাগুলোর চেয়ে কঠিন বলে মনে করা হয়।
গত শনিবার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর সেভেরোদোনেৎস্কে ঢুকে পড়ে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ও শান্তি আলোচক মিখাইলো পোদোলিয়াক আবারও বলেছেন, রুশ বাহিনীর সামর্থ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে তুলনামূলক আরও দূরপাল্লার অস্ত্র প্রয়োজন।
এক টুইটে মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, ‘যখন ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে আপনার ওপর হামলা হচ্ছে এবং পাল্টা হামলা চালানোর মতো আপনার কিছু নেই, তখন লড়াই করাটা কঠিন। ইউক্রেন রাশিয়াকে তার সীমানায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু এ কাজে প্রয়োজন কার্যকর অস্ত্র।’
যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর আরও পেছনের অবস্থানে হামলা চালাতে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সাহায্য করবে হিমার্স। আরও সুরক্ষিত দূরত্বে অবস্থান করেও তারা হামলা চালাতে সক্ষম হবে।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক স্যামুয়েল ক্র্যানি-ইভানস আল-জাজিরাকে বলেন, ‘বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে, ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার কামানের মজুত দীর্ঘ পাল্লার ও সংখ্যায় বেশি।’
স্যামুয়েল ক্র্যানি-ইভানস বলেন, যদি আরও উন্নত করা হয়, তবে বর্তমানে রুশ বাহিনীর ব্যবহার করা রকেট সিস্টেমগুলো দিয়ে ৯০ অথবা ১২০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ব্যাপক ও ধ্বংসাত্মক গোলাবর্ষণ সম্ভব। এসব রকেট সিস্টেমের মধ্যে বিএম-৩০ সিমের্চ (টর্নেডো) রকেট সিস্টেম উল্লেখযোগ্য।
স্যামুয়েল আরও বলেন, যদি হাউইৎজারের পাল্লার বাইরে ব্যবহার করা হয়, তাহলে রাশিয়ার এই রকেট সিস্টেমগুলোর দূরত্ব পর্যন্ত পৌঁছাতে এখন প্রথমত হিমার্সই ইউক্রেনকে সক্ষম করে তুলবে। এই দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম রুশ সরঞ্জাম ও কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেন। লড়াইয়ে টিকে থাকতে এই সরঞ্জামগুলো রাশিয়ার সামর্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হিমার্স রকেট সিস্টেমের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে স্যামুয়েল বলেন, শেষ পর্যন্ত এটা নির্ভর করছে রুশ বাহিনী অভিযানের বিস্তৃতির ওপর নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যবহারে আসা নতুন এই রকেট সিস্টেমের সঙ্গে এর সমন্বয়ে ইউক্রেনের সামর্থ্যের ওপর।
চলমান সংঘাত ইউক্রেনের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে, এমন অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। রকেট, ড্রোন কিংবা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেন যেসব হামলা চালিয়েছে বলে বলা হচ্ছে, এ ধরনের স্বল্পপাল্লার কোনো হামলাকেই যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়নি।
যদি সীমান্তের খুব কাছ থেকে ব্যবহার করা হয়, হিমার্সের সঙ্গে সরবরাহ করা গোলা স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া অভ্যন্তরে গিয়ে পড়বে। তবে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই রকেট সিস্টেম রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাতে ব্যবহার করা হবে না বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা নিশ্চয়তা দিয়েছেন।’ যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম ইউক্রেন সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করবে না ওয়াশিংটন।
এদিকে রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনকে হিমার্স সরবরাহের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে ঝুঁকি বাড়াবে। গতকাল বুধবার ইউক্রেনকে এই রকেট সিস্টেম ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার মার্কিন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের অভিযোগ, এ সংঘাতে ‘আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছে’ ওয়াশিংটন।